![]() |
এক ক্ষুধার্ত বালকের আর্তি ও মুহাম্মদ (সাঃ) |
এক
ক্ষুধার্ত বালকের আর্তি ও মুহাম্মদ(সাঃ)
এক দুঃখজনক
ঘটনা ঘটল একদিন। এক বালক খিদের জ্বালায় আর চলতে পারছিল না। অগত্যা একটি ফলের বাগানে
ঢুকে পড়ল। বাগানটি ছিল সুমিষ্ট ফলে ভরপুর। বালকটি তার ক্ষুধা মেটানোর জন্য কয়েকটা ফল কুড়িয়ে নিল। তারপর পেট ভর্তি করে খেল সেসব ফল। কিছু ফল সে পকেটেও ভরে নিল। বালকটি ভাবল, পরে খিদে পেলে আবার এসব ফল খেয়ে খিদে নিবারণ করবে। পেট ভরে খেয়ে বালকটি আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তাই সে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল।
এমন সময় বাগানের মালিক সেখানে এসে হাজির হলো। বালকটির পকেটে
বাগানের ফল দেখতে পেয়ে মালিক খুব রেগে গেল। তাই সে ক্ষুব্ধ হয়ে বালকটিকে বেদম
প্রহার করল। বালকটির কাছ থেকে ফলগুলোও কেড়ে নিল। শুধু তাই নয়। বাগানের মালিক বালকটির
পরনের কাপড়-চোপড়ও খুলে নিল। গরিব বালক আর কী করবে! সে গিয়ে মহানবী (সা)-এর নিকট
মালিকের বিরুদ্ধে নালিশ জানাল এবং তার ওপর জুলুমের জন্য বিচার চাইল। সে জানাল, হযরত! আমি
একাধারে তিনদিন না খেয়ে ছিলাম। আমাকে একমুঠো খাবার পর্যন্ত দেয়নি। খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে বাগানে
ঢুকেছিলাম।
সেখানে
গাছের তলায় পড়েছিল প্রচুর ফল। এর কয়েকটা ফল কুড়িয়ে খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছিলাম। পরে খাব বলে কিছু ফল পকেটে পুরে রেখেছিলাম। এ জন্য আমি বাগানের মালিকের হাতে ধরা
পড়ি। এ কারণে তিনি আমাকে ইচ্ছেমতো মারধর করেছেন। মারের চোটে আমি
বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম। হুঁশ ফিরে এলে দেখলাম আমার পরনে কাপড় নেই। বাগানের মালিক আমার
সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার কাছে নালিশ জানাচ্ছি। আমি এর বিচার চাই।
মহানবী
(সা)-এর মন ছিল সীমাহীন দরদে পরিপূর্ণ। মানুষের দুঃখ দেখলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়তেন। তার মন কষ্টে ভারি হয়ে উঠত।
মহানবী (সো)
অসহায় বালকটির দুঃখের কথা শুনে মনে প্রচণ্ড কষ্ট পেলেন। তিনি বাগানের মালিককে
ডেকে পাঠালেন। মালিক যথারীতি এসে মহানবী (সা)-এর সামনে
হাজির হলো। মহানবী (সা) লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি তো দেখছ ছেলেটা খুবই ছোট। ক্ষুধার তাড়নায় সে তোমার বাগানে ঢুকেছে। কয়েকটা
ফলও কুড়িয়ে নিয়ে খেয়েছে। এতে কি-ই-বা দোষ হয়েছে? সে তো বিপদে পড়েই এ কাজ করেছে। আর আল্লাহ তাআলা তো তোমার বাগানে
প্রচুর ফল দান করেছেন। তুমি কি বালকটিকে মাফ করতে পারতে না?
মহানবী
(সা)-এর কথা শুনে বাগান মালিক খুব লজ্জা পেল। সে অনুভব করল যে,
কাজটি সে ঠিক করেনি। এটা তার অন্যায় হয়েছে। তাই সে মাফ চাইল। বালকটির কাপড়-চোপড় সব ফেরত দিল। শুধু তাই নয়। বাগানের মালিক বালকটিকে তার
বাড়িতে নিয়ে গেল এবং তাকে আশ্রয় দিল। মহানবী (সা)-এর দরদপূর্ণ মন ও ন্যায়বোধ দেখে
বাগানের মালিক আজ অনন্য এক শিক্ষা পেল। এতে তার জীবনধারাও বদলে গেল। আল্লাহর নবী (সা)-এর কথা শুনে সে একজন বিবেকবান মানুষে পরিণত হলো ।
No comments:
Post a Comment