![]() |
The Furnished Room - O. henry - Translation in Bangla |
সাজানো
ঘর
শহরের পশ্চিম প্রান্তে যারা থাকে তাদের বেশিরভাগই হল অস্থির, চঞ্চলমতি ও সময়ের মত সর্বদা বিচরণশীল চরিত্ররের অধিকারী। এই অংশটি শহরের একেবারে পশ্চিম পাশেই অবস্থিত। শত শত বাড়ি ঘর থাকা সত্ত্বেও মানুষ গুলো গৃহহীন। তাঁরা যাজাবর, চিরস্থায়ী যাযাবর, ক্ষণস্থায়ী তাদের বাসস্থান এমনকি তাদের হৃদয় ও আত্মাও ক্ষণস্থায়ী। তাঁরা গান ধরে, “মধুময় এই ঘর,” যদিও গানের ভিতরে কি বলছে, সে ব্যাপারে তাদের কোন অনুভূতি নেই। তাঁরা তাদের সকল কিছু একটি ছোট বাক্সে বয়ে বেরায়। বাগান বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তাদের কাছে ফুল আর পাতা হল সেই জিনিস, যা মেয়েদের হ্যাটের কোনায় গুজে রাখতে হয়।
কাজে
কাজেই
হাজার
হাজার
বাসিন্দার
পদধুলি-ধন্য
এখানকার
বাড়িগুলোর
বলার মতো হাজার হাজার
গল্প
থাকাটাই
স্বাভাবিক।
নিঃসন্দেহেই
এগুলো
প্রায়শই নিরানন্দ, একঘেয়ে, কিন্তু
এতসব
হা-ঘরের
ভেতর
কিছু দেহহীন আত্মার অস্তিত্ব না থাকাটাও অস্বাভাবিক।
এক
সন্ধ্যায়
ঘন্টা
বাজাতে
বাজাতে
এক
যুবক
ঘুরে
বেড়াচ্ছিল
এসব
নুয়ে
পড়া
লাল বাড়ির দরজায় দরজায়। দ্বাদশ বাড়ির সামনে
এসে
সে
জীর্ণ
হাতব্যাগটা
নামিয়ে
রাখল সিঁড়ির ওপর, তারপর
টুপি
ও
কপালের
ধুলো
মুছে
নিল
রুমাল
দিয়ে।
ঘণ্টাটা
বেজে উঠল ক্ষীণস্বরে,
বহু
দূরে,
যেন
কোনো
পাতালপুরীতে। দরজায় এসে দাঁড়াল
একজন মহিলা। তাকে দেখে
মনে
হল
নোংরা
এক
পোকার
কথা; চর্বিবহুল, যেটার কোন রঙ নেই, হাত-পাও নেই, মাটির নিচের কোন গর্ত থেকে যেন এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে, খেয়ে ফেলার জন্যে কাউকে যেনো খুজছে।
ভাড়া
দেবার
মতো
ঘর
খালি
আছে
কি
না
জানতে
চাইল যুবক। ভেতরে আসুন,
বললেন
গৃহকত্রী।
যেন
আঁটো
লোমশ-কোটে
ঘেরা
গলা
থেকে বেরিয়ে এল কথাটা।
চার-তলার
একটা
ঘর
সপ্তাহ খানিক
ধরে
খালি
পড়ে
আছে।
ইচ্ছে করলে দেখতে পারেন।
তার
পিছন পিছন সিঁড়ি
বেয়ে
উঠতে
লাগল
যুবক।
অজানা
উৎস
থেকে
আসা
একটা নিষ্প্রভ আলো আর
হলগুলোর
ঘুটঘুটে আঁধারের মিলন।
সিঁড়িতে
বিছানো
কার্পেটের দুর্গতি দেখলে লজ্জায়
মরে
যেত
তার
নির্মাতা।
সেটা
যেন
রূপান্তরিত
হয়েছে
কোন গাছে। রোদবিহীন সিড়িতে
যেন
নরম
শ্যাওলা
গজিয়েছে,
মনে
হচ্ছে,
কোনো
জান্তব
পদার্থের ওপর পা পড়ছে।
সিড়ির
মোড়ের
কুলুঙ্গি গুলোতে
এককালে
হয়ত
চারাগাছ
সাজানো
ছিল। দূষিত বাতাসে বহুদিন
আগেই
অক্কা
পেয়েছে
তারা। বুঝতে কষ্ট
হয়
না
যে,
জ্বিন-পরি
আর
শয়তানরা
মিলে
সেগুলোকে
টেনে নামিয়ে নিয়ে গেছে
নিচের
আঁধার
আর
অশুভভাবে
সুসজ্জিত
কোনো
গর্তে।
ফোঁসফেঁসে গলায় গৃহকত্রী
ঘোষণা
করলেন,
এই
সেই
ঘর।
ঘরটা খুব ভাল
কিন্তু! এ-ঘর সহজে
খালি
পাবেন
না।
গত
গ্রীষ্মে
নামজাদা
লোক
সব
ছিল
এখানে-কোনো হই-হাঙ্গামা
নেই,
শেষমুহূর্ত
পর্যন্ত
ভাড়াটা
আগাম
দিয়েছিল
তারা।
হলঘরের
ও-ধারে জলের কল। স্প্রাউলস
আর
মুনি
তিনমাস
ছিল
এ-ঘরে।
মিস
বেরেটা উলস-এর
নাম
অবশ্যি
শুনেছেন
আপনি-সেটা তার মঞ্চের নাম-দেয়াল-আলমারির
মাথার
ওপর
ওই
ওখানে
ঝোলানো
ছিল
তাদের
বাধানো বিয়ের সার্টিফিকেটটা
।
গ্যাসটা
এখানে,
আর
তাছাড়া
জিনিসপত্র
রাখবার
জায়গা
যে
কত
সেটা
তো
দেখছেনই।
ঘরটা
সবারই
পছন্দ।
বেশি
দিন
খালি
পড়ে
থাকে
না।
‘থিয়েটারের লোকজন কি
এখানে
অনেক
থাকে?’
‘তা তারা আসেন
আর
যান।
আমার
ভাড়াটেদের
অনেকেরই
থিয়েটারের
সাথে আনাগোনা আছে। হ্যা
মশাই,
এটাকে
থিয়েটারি
বস্তি
বলতে
পারেন।
অভিনেতারা
বেশি দিন তিষ্ঠে না
কোথাও।
আমার
এখানেও
আসেন
অনেকে।
তা,
তারা
আসেন
আর
যান।’
এক
হপ্তার
ভাড়া
আগাম
দিয়ে
ঘরটা
নিতে
রাজি
হল
যুবক।
বলল,
বড়
ক্লান্ত
সে, তক্ষুনি দখল নেবে।
গুনে
গুনে
টাকা
কয়টা
দিয়ে
দিল।
ঘরটা
সাজানো-গোছানো
আছে, বলল মহিলাটি।
গৃহকত্রী
নড়বার
নামটি
করতেই
হাজার বারের বার প্রশ্নটা
করল
যুবক
যে
প্রশ্ন
সাপটে
আছে
তার
জিবের
ডগায়
‘একটা যুবতী মেয়ে
নাম
মিস
ভাসনার—মিস
ইলুইস ভাসনার। ভাড়াটেদের ভেতর এমন কেউ ছিল
বলে
মনে
পড়ে
কি?
ফর্সা
রঙ,
মাথায়
মাঝারি,
লালচে-সোনালি চুল আর বাম
ভুরুর
নিচে
একটা
কালো
তিল।’
‘না, নামটা স্মরণ
হয়
না।
তাঁরা
থিয়েটারের
লোক,
যতবার
ঘর
বদলায়
তার
চেয়ে বেশি বদলায়
নাম।
তারা
আসেন
আর
যান।
নাহ্,
তেমন
কোনো
নাম
স্মরণ
হয়
ন।’
‘না, না আর
না!
পাঁচ মাস
ধরে
সীমাহীন
জিজ্ঞাসা
আর
ঐ
একই
নেতিবাচক জবাব। সারা দিনমান
ম্যানেজার-এজেন্ট, স্কুল-কোরাস,
আর
রাতের
বেলা
দর্শক
থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রী
আর
বাজনদারদের
পর্যন্ত
খোঁজাখুঁজি
আর
প্রশ্ন।
এমন সব নোংরা জায়গায়
সে
খুঁজেছে
মেয়েটিকে যে, সেখানে
পাবার
সম্ভাবনা
আতঙ্কিত
করে
তুলেছে
তাকে।
ওকে
ভালোবাসে
সে,
আর
তাই
খুঁজেছে
পই
পই
করে।
তার
দৃঢ় বিশ্বাস, ওর নিরুদ্ধেশের
সময়
থেকে
জলঘেরা
এই
শহর
স্থিতিহীন
চোরাবালির
মতো এখানে সেখানে
লুকিয়ে
বেড়াচ্ছে
ওকে।’
সাজানো
ঘরটা
স্বাগত জানাল তার সর্বশেষ
ভাড়াটেকে।
ক্ষীয়মাণ
আসবাব,
একখানা
কৌচ
আর
দু-খানা চেয়ারের জীর্ণ বিবর্ণ
ব্রোকেড,
দু-জানলার
মাঝের
সস্তা
আয়নাখানা
আর
এককোণের শোবার খাটটা যেন
মুখব্যাদান
করে
আছে
তাকে। একখানা চেয়ার
আশ্রয়
করল
নতুন
অতিথি-এলিয়ে বসল জড়
পদার্থের
মতো।
ঘরটা
তাকে
বলতে
চাইল
হাজারো
ভাড়াটের
বহুতর
বিচিত্র
কাহিনী,
বিক্ষিপ্ত
অসংবদ্ধ যে-কাহিনী ভারাক্রান্ত
করে
রেখেছে
ঘরের
বাতাসকে,
ঠোকাঠুকি
করছে
চার
দেয়ালে। উষ্ণমণ্ডলীয়
ছোট
দ্বীপের
মতো
বহু
রঙের
ফুল-কাটা
একখানা
কম্বল
আর
তাকে
ঘিরে সমুদ্ররূপী নোংরা মাদুর।
রঙচঙে
কাগজে
মোড়া
দেয়ালে
ঝুলছে
সেই
ধরনের
কয়েকটি ছবি।
একখান
ময়লা
কাপড়ে যেভাবে দেয়ালের তাকটাকে
আড়াল
করবার
ব্যর্থ
চেষ্টা
হয়েছে,
তা
দেখে
মনে
হতে
পারে,
আমাজান
নদীর
ঘোমটার
কথা।
আর
তার
ভেতর
থেকে
উঁকি
দিচ্ছে
গোটা-দুই ফুলদানি, অভিনেত্রীদের
ছবি,
একটা
ওষুধের
বোতল
আর
কয়েকটি তাস। এবারে শুরু
হল পূর্বের বাসিন্দাদের
ক্রমিক
আত্মপ্রকাশ।
অভ্যাগতদের বিরাট শোভাযাত্রা
যে-সব
ছোটখাটো
চিহ্ন
ফেলে
গেছে
তারা
বৈশিষ্ট্য
নিয়ে
দেখা
দিল। দেয়াল-আলমারির সামনের
পর্দায়
গেঁথে-রাখা
সুচের
ফোড়
দ্ব্যর্থহীনভাবে
বলে
গেল,
এই অফুরন্ত জনস্রোতে সুন্দরীদের
সংখ্যাটাও
কিছু
নগণ্য
নয়।
দেয়ালের
গায়ের
ছোট্ট
আঙুলের ছাপ সাক্ষ্য দিল,
এতটুকু
রোদ
আর
বাতাসের
জন্যে
ক্ষুদে
বন্দিদের
করুণ
আকুতির।
ভেতরের
বস্তু সমেত
ছুড়ে-মারা
বোতল
বা
অনুরূপ
কোনো
কাচের
জিনিস
যেখানে
দেয়ালে গায়ে পড়ে ভেঙে
শতধা বিভক্ত
হয়ে
গিয়েছিল,
ফাটা
বোমার
ধোয়ার
মতোই
একটা
দাগ
স্থায়ী হয়ে আছে
সেখানে।
আয়নার
ওপর
কোনো
মেয়েলি
হাত
হীরে
দিয়ে
কাঁপা
হাতে
মেরি নামটা খোদাই করে
রেখেছে।
মনে
হয়
কবরের
মতো
দম
বন্ধ
হয়ে
আসা
ঠাণ্ডায়
ধৈর্য হারিয়ে ক্ষিপ্ত ভাড়াটে ঝাল মিটিয়েছে আসবাবপত্রের
ওপর।
ক্ষত-বিক্ষত
সেগুলো। স্প্রিং বেরিয়ে এসে
কাউচটাকে বীভৎস করে
রেখেছে,
যেন
কোনো
অতিকায়
দানবকে
মেরে ফেলে রাখা হয়েছে
অমানুষিক
নৃশংসতার
সাথে।
আরো
কোন
প্রচণ্ড
ভূমিকম্পের ফলে
সাদা পাথরের
তাকটার
একটুকরো
নিরুদ্দেশ
হয়ে
গেছে।
মেঝের
প্রতিটি
তক্তা
নিজস্ব
বিশিষ্ট সুর ও ছন্দে
শুনিয়ে
যাচ্ছে
তার
মনের ব্যথা।
এককালে
যারা
একে
ঘরবাড়ি
বলে
ভেবেছে, এসব প্রলয়কাণ্ড
তাদেরই হাতে ঘটেছে বলে
বিশ্বাস
করা
কঠিন।
চিন্তারা
আস্তে আস্তে সার
বেঁধে
এগিয়ে
যায়
যুবক
ভাড়াটের
মনের
পথে।
ইতিমধ্যে ঘরের ভেতর ভেসে
এল
সাজানো
শব্দ
আর
সাজানো
গন্ধ। হালকা, টুকরো হাসি
এল এক ঘর থেকে;
অন্য
ঘরগুলো
থেকে
গালাগালি,
পাশা
খেলার
চাল,
ঘুমপাড়ানি
গান
বা টানা কান্না। ওপরতলায়
প্রাণ
ঢেলে
ব্যাঞ্জো বাজাচ্ছে কেউ।
কোথায়
যেন
সশব্দে
বন্ধ হল একটা দরজা,
কী
ঘর্ঘর
শব্দই
না
করতে
পারে
ট্রলিগুলো।
পেছনের
দেয়ালের
ওপর করুণ সুরে ডাকছে
বিড়ালটা।
আর
মাটির
নিচের
নর্দমা
আর পচা
কাঠের
মিলিত
গন্ধের মতো দুর্গন্ধ-বাতাসে
দম
আটকে
আসার
জোগাড়
নতুন
ভাড়াটের।
আচমকা
দমকা
হাওয়ার
সাথেই
যেন
মিনোনেট ফুলের (mignonette) গন্ধে ভরে
গেল
ঘরটা।
এত আচমকা যে, মনে
হবে,
কোনো
আগন্তুকের
পোশাকের
গন্ধ
সেটা।
‘কী, কী প্রিয়?’চেঁচিয়ে
উঠল
যুবক।
মিষ্টি
গন্ধটা
লেপ্টে
ধরেছে
তাকে,
আলিঙ্গন
করছে
যেন।
সেও এগিয়ে গেল দু-হাত
বাড়িয়ে,
তার
সমগ্র
চেতনা
শ্লথ,
অভিভূত।
গন্ধ
কী
করে
এমন সুস্পষ্টভাবে ডাকতে পারে?
নিশ্চয়ই
কোনো
শব্দ
শুনেছে
সে।
তার
কানে
কি
মধু
ঢালে নি সে শব্দ,
পুলকিত
করে
নি
তাকে?
নিশ্চয়ই
এ-ঘরে
ছিল
সে,
চিৎকার করে
বলল
সে।
পাগলের
মতো
হাতড়ে
বেড়াতে লাগল সে ঘরময়।
ওর
সামান্যতম
জিনিস
চিনতে
পারবে
সে,
যে-কোনো
জিনিসে
ওর ছোঁয়া লেগেছে তাতেই
ওর
গন্ধ
পাবে।
মিনোনেট ফুলের
এই
বিশিষ্ট
গন্ধটা
অনেক প্রিয়
ছিল ওর। কোথেকে
এল
এটা?
ঘরের
জিনিসপত্র
খাপছাড়াভাবে
সাজানো।
দেয়াল-আলমারির
তাকে
গুটিকয়
চুলের কাঁটা- নারীজাতির বৈশিষ্ট্যবিহীন
নিত্য-সহচরী।
এই
বাহুল্য
মেয়েলি
জিনিসপত্র
কোনো পরিচয়ই ইঙ্গিত করে
না,
সেদিকে
তাকালোও
না
সে।
দেরাজ
হাতড়ে
পেল
একখানা ছেঁড়া
রুমাল।
নাকে
চেপে
ধরল
সেটা।
অন্য একটি ফুলের কড়া গন্ধে
নাকে
জ্বালা
ধরে উঠল। রুমালখানা মেঝেয়
ফেলে
পায়ে
মাড়িয়ে
দিল
যুবক।
আর-এক
দেরাজে
পাওয়া গেল কটা বোতাম,
একটা
থিয়েটারের
প্রোগ্রাম,
মার্শমেলোর
পাপড়ি
আর
স্বপ্নের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত একখানা
বই।
শেষ
দেরাজে
পাওয়া
গেল
কালো
সার্টিনের
চুলের
একটা বিড়াল। আশা-নিরাশার
দোলায়
দোল
খেল
মনটা,
কিন্তু
চুলের
কাটার
মতো বিড়ালটাও এত
বিশেষত্ববর্জিত
মেয়েলি
অলঙ্কার
যে,
তা
থেকে
কোনো
কাহিনীই
প্রকাশ পায় না। উত্তেজিত
শিকারি
কুকুরের
মতো গন্ধ শুকে শুকে
ঘরময়
ছুটোছুটি
করতে
লাগল সে, মাথা ঠুকে
গেল
দেয়ালে।
তোশকের গদির আর
গালচের
ফোলা
জায়গাগুলে অনুভব করে দেখতে
লাগল
হাতে,
পায়ে,
হাঁটুতে।
এতটুকু
পরিচিত
জিনিসের
সন্ধানে টেবিল, তাক, কুলুঙ্গি,
পর্দা
সব
একাকার
করে
ছাড়ল।
এ-ঘরেই
আছে
সে,
কিন্তু কোথায়, দেখতে পাচ্ছে
না।
এ-ধারে,
এখানে,
পাশে,
আলিঙ্গনে,
পায়ের
তলায়,
মাথার ওপর-কোথাও-না-কোথাও
আছে
সে,
তার
ডাকও
শুনতে
পাচ্ছে।
আবারও
চেঁচিয়ে উঠল সে। ‘এই যে, কী
মণি?’ ঘুরে দাঁড়িয়ে
চাইল
পেছনে,
কিন্তু
সেখানে
শুধু
সীমাহীন শূন্যতা।
হায়
আল্লাহ! কোথেকে এল
গন্ধটা,
আর
কবে
থেকেই বা গন্ধ কথা বলতে
শিখেছে? ঘরের নোংরা আনাচে-কানাচে
পাওয়া
গেল
ভাঙা
কর্ক আর
পোড়া
সিগারেট। অবজ্ঞায় সে-গুলো
সে
ফেলে
দিল।
গালচের
ভাঁজ
থেকে
বেরুল
আধপোড়া
সিগারেট একটা। রাগে গজরাতে-গজরাতে
পায়ে
পিষে
ফেলল
সেটা।
প্রাগৈতিহাসিক
যুগ
থেকে
ভাড়াটেদের
আরও
অনেক
অবজ্ঞার
স্মৃতিচিহ্ন
পাওয়া
গেল।
কিন্তু
যাকে
খুঁজে
বেড়াচ্ছে হন্যে হয়ে; এ-ঘরে
থেকেছে
যে,
আর
এখনও
যার
আত্মা
ঘুরে
বেড়াচ্ছে
এখানে
কোনো চিহ্নই পাওয়া গেল
না
তার।
তারপর
মনে
পড়ল
বাড়িউলির
কথা।
ভুতুড়ে
ঘর
থেকে
ছুটে
বেরিয়ে
গেল
সে,
তর তর করে নেমে
গেল
সিড়ি
বেয়ে।
একটা
ভেজানো
দরজার
ফাকে
একফালি
আলো। ধাক্কা দিতেই বুড়ি
বেরিয়ে
এল।
গলায়
উত্তেজনা
যতদূর
সম্ভব
শান্ত
করে
যুবক
বলল,
‘দয়া করে
বলবেন,
আমার
ঠিক
আগে
কে
ছিল
এ-ঘরে?’
‘নিশ্চয়ই। তারা হল স্পাউলস
আর
মুনি। থিয়েটারের নাম ছিল
মিস বিরেটা স্পাউলস আর
আসল
নাম
মিসেস
মুনি।
বাঁধাই-করা
বিয়ের
সার্টিফিকেটটা একটা পেরেকের ওপর---’।
‘মিস
স্প্রাউলস কেমন ছিল—মানে
দেখতে?’।
‘ইম, মনে আছে
ঠিক।
বেঁটে,
মোটাসোটা
আর
সঙের
মতো
মুখ।
মাত্র মঙ্গলবারে তো গেল তারা।’
‘আর তার আগে?’
‘এক
আইবুড়ো বদমাস লোক। একসপ্তাহের
ভাড়া
বাকি রেখে চলে গেলেন
তিনি।
তার
আগে
চার
মাস
ছিলেন
মিসেস
ক্রাউডার
আর
তার
দুই বাচ্চা।
তারও
আগে
ছিলেন
মি. ডয়েল, ভাড়া দিত
তার
ছেলেরা।
তিনিও
ছিলেন
ধরুন ছ-মাস। এই
হল
গিয়ে
এক
বছরের
হিসেব।
তার
আগের
কথা
ঠিক
বলতে
পারব
না, বাবা।’
বুড়িকে
ধন্যবাদ
দিয়ে
ফিরে
এল
সে।
ঘরটা
যেন
মরে
গেছে
এতক্ষণে।
পাগল-করা গন্ধটার লেশমাত্র নেই
আর।
এক-শ
বছরের
থুথুরে
বুড়োর
ভাঙা
গালের
মতো
অসহায় মনে হচ্ছে ঘরটাকে
আর
গুদামঘরের
বদ্ধ
বাতাসের
মতো
গন্ধ
পাওয়া
যাচ্ছে
তা
থেকে। হতাশায় ভেঙে পড়ল
তার
বিশ্বাস।
হলদে
গ্যাসবাতিটার
দিকে
শূন্যদৃষ্টি মেলে বসে রইল
সে।
তারপর
উঠে
গিয়ে
ক্ষেপে ওঠার পাগলের
মতো
ছিড়তে
লাগল
তোশক,
বালিশ আর জাজিম। ছুরির
মাথা
দিয়ে
সেগুলো
গুজে দিল দরজা
আর
জানালার
ফাকে। বাতাস ভারি হয়ে
এল
মুহূর্তে,
গ্যাসবাতিটা
নিভিয়ে
দিয়ে
আবার
খুলে
দিল
গ্যাস; তারপর পরম তৃপ্ত
মনে
শুয়ে
পড়ল
বিছানায়।
জুসের ভরা
পাত্রটা
এনে
মিসেস ম্যাককুল বসল মিসেস পার্টির সাথে।
ঘুরঘুট্টি
আঁধারে
এ-ধরনের
ঘরে
বাড়িওলিরাই
শুধু
আসর
জমাতে পারে, তুচ্ছাতিতুচ্ছ
পোকাও
এতে
এসে
মরতে
চাইবে
না
এখানে। ফেনিল পাত্রে
চুমুক
দিয়ে
মিসেস
পার্ডি বলল, ‘আজ সন্ধ্যায়
চারতলার খালি ঘরটা ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। নিয়েছে একটা জোয়ান লোক। ঘন্টা-দুই হয়
শুয়ে
পড়েছে।
‘তাই নাকি? অবিশ্বাস্য
বিস্ময়ে
বলল
মিসেস
ম্যাককুল।
ঘর
ভাড়া
দেবার
ক্ষমতা তোমার আশ্চর্য। সবকিছু
বলেছ
ওকে?’ শেষের কথাগুলো
বলল
সে
ফিসফিসিয়ে।
আবার
সেই
ফাসফেঁসে
গলায়
বলল
মিসেস
পাডি,
‘সাজানো গোছানো ঘর,
সে-তো ভাড়া দেবেই। এতে
আর
বলাবলির
কী
আছে?’
‘তা যা বলেছ।
ঘর
ভাড়া
দিয়েই
তো
ভাত
জুটবে
আমাদের। আর ব্যবসার বুদ্ধি তোমার পাকা বলতেই
হবে। এ-ঘরের বিছানায়
শুয়ে
কেউ
আত্মহত্যা
করেছে
শুনলে
বহু লোকই ঘর ভাড়া
নিতে
রাজি
হবে
না।’
‘ঠিকই
বলেছ।
ঘর
ভাড়া
দিয়ে
ভাত
জুটবে
আমাদের,
মন্তব্য
মিসেস
পার্ডির।’
‘তা বটে! মাত্র একসপ্তাহ আগে চার-তলাটা
গোছাতে
তোমাকে
সাহায্য করেছি। কি সুন্দর ছোট্ট একটা মেয়ে! আর গ্যাস ছেড়ে দিয়ে আত্মহত্যা করল। ছোট্ট মুখটা কি সুন্দর ছিল।’
‘তাকে সুন্দরী বলা যেতেই পারে,’ মিসেস পার্ডি বলে চলেছেন, ‘শুধু তার বাম চোখের নিচের কালো দাগটা, যেটা বেড়েই চলেছিল, তোমাকে আর এক গ্লাস ঢেলে দেই?’
No comments:
Post a Comment