![]() |
রহস্য গল্প,বড় গল্প,উপন্যাস,অস্কার ওয়াইল্ড,বাংলা অনুবাদ গল্প,LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME,Translation in Bengali,Oscar Wilde,bangla translation, |
Link: ৩য় পর্ব
LORD ARTHUR SAVILE’S CRIME – Oscar Wilde - Translation in Bengali Part 4 of 4 - লর্ড আর্থার সেভিলের অপরাধ - অস্কার ওয়াইল্ড - বাংলা অনুবাদ গল্প
- - - - - - - - - - - - - - -
পর্বঃ ৪ (শেষ পর্ব)
পরবর্তী দুটো দিন কাটল দারুণ উত্তেজনার মধ্যে। শুক্রবার বেলা বারোটায় খবর পাবার আশায় লর্ড আর্থার গেলেন বাকিংহামে। কিন্তু সারা বিকেল জুড়ে হল-পোর্টার দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাল ঘোড়ার রেস, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা আর আবহাওয়া সংক্রান্ত টেলিগ্রাম পাঠালো। চারটেয় এল সান্ধ্য সংবাদপত্রগুলো। পল মল, সেন্ট জেমস, গ্লোব আর ঈকো (Pall Mall, the St. James’s,
the Globe, and the Echo) নিয়ে লর্ড আর্থার ঢুকে পড়লেন লাইব্রেরিতে। কিন্তু মৃত্যুসংবাদ তো দূরের কথা, চিচেস্টারেরই কোন সংবাদ নেই। ভয় ভয় করতে লাগল। তাঁর, নিশ্চয় ঘটেছে আবার কোন দুর্ঘটনা এবার কিছু হলে আর মনোবল বজায় রাখা সম্ভব হবে না। পর দিন দেখা করতে গেলেন তিনি হের উইঙ্কেলকফের সঙ্গে। দুঃখ প্রকাশ করে আরেকটা ঘড়ি বিনা মূল্যে দিতে চাইলেন ভদ্রলোক, কিংবা ক্রয় মূল্যে নাইট্রো গ্লিসারিনের একটা কেস কিন্তু বিস্ফোরকের ওপর সমস্ত বিশ্বাস হারিয়ে গেছে লর্ড আর্থারের। উইঙ্কেলকফ বললেন, জিনিসপত্রে এত ভেজাল হয়েছে যে ডিনামাইটকে পর্যন্ত আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তবে ঘড়িটা বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা এখনও উড়িয়ে দেয়া যায় না। মেকানিজম, কখনও কখনও দেরিতে কাজ করে। এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল ওডেসার (Odessa) মিলিটারি গভর্নরের জন্যে বোমা পাঠিয়ে বোমাটা বসানো ছিল একটা ব্যারোমিটারের মধ্যে, দশ দিনের সময় দেয়া থাকলেও ফেটেছিল তিন মাস পর। ধুলো হয়ে গিয়েছিল এক পরিচারিকা, গভর্নর বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন দেড় মাস আগে। এসব সান্তনার কথা মোটেই ভাল লাগল না লর্ড আর্থারের। দুদিন পর তিনি যখন ওপরতলায় যাচ্ছেন, ডাচেস তাকে ডেকে পাঠালেন খাস কামরায়।
‘এত মজার চিঠি লিখতে পারে জেন।’ তিনি ভেতরে ঢুকতেই সদ্য পাওয়া একটা চিঠি বাড়িয়ে দিলেন ডাচেস। পড়ে দেখো, মিউডি আমাদের যে-উপন্যাসগুলো পাঠায়, ঠিক সেরকম মজার।’
ডীনের বাড়ি থেকে আসা চিঠিটা নিয়ে পড়তে লাগলেন লর্ড আর্থার। চিঠিটা এরকমঃ
দ্য ডীনারী, চিচেস্টার
২৭ মে
প্রিয় ফুফু,
ডরকাসদের জন্যে ফ্লানেল আর আমার জন্যে জিংহ্যাম (gingham) পাঠিয়েছেন বলে ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত যে ওদের মূল্যবান পোশাক আশা করা উচিত নয়। কিন্তু মানুষ এখন এমনই হয়েছে, অভিজাত শ্রেণীর মত পোশাক পরতে চাওয়া যে তাদের ঠিক নয়, এটাও তারা মানতে চায় না। ধীরে ধীরে আমরা যে কোন পথে এগিয়ে চলেছি, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। বাবার কথাই ঠিক – আমরা বাস করছি এক অবিশ্বাসের (unbelief) যুগে। ইতিমধ্যে আমাদের এখানে দারুণ মজার এক কাণ্ড হয়েছে। বাবার এক
অজ্ঞাত ভক্ত তাঁর নামে একটা ঘড়ি পাঠিয়েছে গত বৃহস্পতিবারে। কাঠের একটা বাক্সে ঘড়িটা এসেছে লণ্ডন থেকে। ঘড়িটা মোটেই পছন্দ হয়নি আমার, কিন্তু বাবার মতে ওটা ঐতিহাসিক। তাঁর কথা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তিনি আবার বিখ্যাত ঘড়ি বিশেষজ্ঞ। যাই হোক, পার্কার বাক্স খোলার পর বাবা ঘড়িটা রেখে
দিলেন ম্যান্টেলপীসের ওপর। শুক্রবার বেলা ঠিক বারোটায় শোঁ শোঁ করে উঠল ঘড়িটা, আর তারপরই চারপাশ ধোঁয়ায় অন্ধকার। জেমস আর আমি তো হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লাম, বাবাও তাঁর গাম্ভীর্য বজায় রাখতে পারলেন না। ভাল করে পরীক্ষা করতে দেখা গেল,
ঘড়িটা অ্যালার্ম জাতের। ভেতরে ছোট্ট একটা হ্যামার আছে। সময় নির্দিষ্ট করে হ্যামারটার নিচে কিছু বারুদ আর একটা ক্যাপ রাখলেই ফুটে উঠবে যথাসময়ে। রেগি (Reggie) শয়তানটা তো এখন সারা দিন বারুদ নিয়ে ফোটাচ্ছে। বিয়ের উপহার হিসেবে ঘড়িটা পাঠিয়ে দেব আর্থারকে? লণ্ডনের লোক এটা নিশ্চয় খুব পছন্দ করবে।
এখনই গিয়ে আপনার মহামূল্যবান চিঠিটা পড়ে শোনাব ডরকাসদের। সত্যি, পৃথিবীতে উদ্বেগের এত কিছু থাকতে পোশাক নিয়ে উদ্বেগের কোন মানে হয় না। আপনার ফুলতোলা পপলিনটার লেস এখনও ছেড়েনি জেনে খুশি হলাম। গত বুধবার বিশপের বাসভবনে গিয়েছিলাম আপনার দেয়া হলুদ সাটিনটা পরে। বো-টাই ব্যবহার করছেন? জেনিংস বলে ইদানীং ওটাই নাকি ফ্যাশন, আর আণ্ডারস্কার্ট হতে হবে ঝালর দেয়া। ওই যে আবার বারুদ ফোটাল রেগি শয়তানটা, আর সঙ্গে সঙ্গে বাবা আদেশ দিলেন ঘড়িটা আস্তাবলে রেখে আসার। মনে হয় প্রথমে ঘড়িটাকে যেমন পছন্দ করেছিলেন বাবা,
এখন আর ততটা করছেন না। তবে ওটা উপহার পাবার ফলে এটা অন্তত পরিষ্কার বোঝা গেল যে জনগণ বাবার লেখা ধর্মীয় উপদেশাবলীর গ্রন্থটি পড়ছে এবং তার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। বাবা আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে জেমস,
রেগি আর মারিয়া। সিসিল (Cecil) ফুফার বাতটা এখন আশা করি, আগের চেয়ে ভাল। আজ এখানেই শেষ করি।
আপনার স্নেহের ভাইঝি
পুনশ্চ :
বো-টাই পরছেন কিনা জানাবেন। জেনিংস জোর দিয়ে বলছে, ইদানীং ওটাই নাকি ফ্যাশন।
চিঠিটা পড়ে এতই দুঃখী হয়ে গেল লর্ড আর্থারের চেহারা যে হাসিতে ফেটে পড়লেন ডাচেস।
‘কোন যুবতীর লেখা চিঠি তোকে আর কখনও দেখাব না,
বাছা। তবে যা-ই বলিস,
ঘড়িটা মনে হয় দারুণ এক আবিষ্কার। অমন একখানা ঘড়ি আমার থাকলে ভালই লাগত।
‘ঘড়ি সম্বন্ধে আমি খুব বেশি কিছু জানি না,’
মাকে চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন লর্ড আর্থার। ওপরতলায় উঠে সোফায় গা এলিয়ে দিতেই তাঁর দু’চোখ ভরে এল পানিতে। একটা হত্যাকাণ্ড ঘটাবার জন্যে দু’দু’বার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন তিনি,
দু’বারই ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এই ব্যর্থতার পেছনে তাঁর কোন দোষ নেই। স্বয়ং নিয়তিই যেন বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছে। তার মনে হলো, বিয়েটা ভেঙে দেয়াই বুঝি ভাল। সিবিল অবশ্য খুব কষ্ট পাবে, তবে সামলে নিতে পারবে নিশ্চয়। নিজের চিন্তা তিনি করতে চান না। পুরুষ তার জীবন দেয়ার অনেক পথ খুঁজে পায়। সব সময়ই কোন না কোন লড়াই থাকে,
কিংবা...থাক,
তিনি নিজে।
থেকে কিছু করতে যাবেন না,
যা করার নিয়তিই করুক।
সাড়ে সাতটায় তিনি গেলেন ক্লাবে। এক যুবকের দেয়া পার্টিতে দেখা হলো সার্বিটনের সঙ্গে। কিন্তু টুকরো-টাকরা কথা আর অলস রসিকতা তাকে মোটেই আকর্ষণ করতে পারল না। একটা অজুহাত তৈরি করে পার্টি ত্যাগ করলেন লর্ড আর্থার। ক্লাব থেকে বেরোবার মুখে একটা চিঠি দিল হল-পোর্টার। আগামীকাল সন্ধ্যায় দেখা করতে বলেছেন হের উইঙ্কেলকফ। জেনেভা থেকে সদ্য একটা বিস্ফোরক ছাতা এসেছে, যেটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। চিঠিটা কুটি কুটি করে ফেলে দিলেন তিনি, এই ধরনের পরীক্ষা চালানোর ইচ্ছে তাঁর উবে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে টেমসের তীরে এসে বসে পড়লেন লর্ড আর্থার। আকাশ জুড়ে ছড়ানো অসংখ্য ভারী,
কেশর আকারের মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে সিংহের চোখের মত। মাঝেমাঝেই ঢেউ তুলে চলে যাচ্ছে বার্জ, ট্রেন চলে যাবার পর সবুজ আলো পরিবর্তিত হচ্ছে লালে। কতক্ষণ পর ঢং ঢং করে বারোটা বাজল, ওয়েস্টমিনিস্টারে,
প্রত্যেকটা শব্দের সঙ্গে যেন কেঁপে কেঁপে উঠল রাত। তারপর ধীরে ধীরে নিবে গেল রেলওয়ের আলো, শুধু একটা আলো জ্বলতে লাগল প্রকাণ্ড এক চুনির মত। শহরের কোলাহল হলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর।
দুটোয় উঠে পড়ে লর্ড আর্থার এগোলেন ব্ল্যাকফ্রায়ার্সের (Blackfriars) দিকে। সমগ্র প্রকৃতিই এখন কেমন অবাস্তব এক স্বপ্নের জগৎ! নদীর ওপারের বাড়িগুলো যেন অন্ধকার দিয়ে তৈরি,
সেন্ট পলসের (St. Paul) গম্বুজ যেন ঝাপসা বাতাসের এক বিশাল বুদবুদ।
ক্লিওপেট্রাজ নীডলের (Cleopatra’s Needle) দিকে এগোতে গিয়ে দেখলেন, একটা লোক ঝুকে আছে
প্রাচীরের (parapet) ওপর দিয়ে। আরও কাছে যেতে গ্যাসের আলোয় দেখতে পেলেন লোকটার মুখ।
মি. পজার্স! কিরোম্যান্টিস্ট! সোনালি প্রান্তবিশিষ্ট চশমা, চর্বিবহুল
গোলগাল মুখ-হ্যা,
কোন ভুল নেই।
লর্ড আর্থার থামলেন। চকিতে একটা চিন্তা খেলে গেল তাঁর মাথায়। অত্যন্ত সন্তর্পণে এগোলেন তিনি পা টিপে টিপে। তারপর মি. পজার্সের দু’পা চেপে ধরে, শূন্যে তুলে; চোখের পলকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন টেমসে (Thames)। বিশ্রী একটা গালি,
ঝপাস করে একটা শব্দ,
তারপরই সব শান্ত। উদ্বিগ্ন হয়ে কিছুক্ষণ ঝুকে রইলেন-লর্ড আর্থার কিন্তু তীব্র ঘোতে ভেসে যাওয়া লম্বা একটা হ্যাট ছাড়া আর কোন চিহ্নই দেখতে পেলেন না হস্তরেখাবিদের। একবার মনে হলো, সেতুর ওপর যেন হামাগুড়ি দিয়ে উঠছে ছোটখাট একটা লোক। আবার কি ব্যর্থ হলেন?
কিন্তু না মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ পুরোপুরি বেরিয়ে আসতেই বুঝতে পারলেন, ‘ওটা ছিল তাঁর চোখের ভুল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি, নিয়তি তাহলে শেষমেষ এভাবেই কাজ করল! বেশ কিছু দিন পর স্বস্তি পেলেন লর্ড আর্থার, চোখের সামনে ভেসে উঠল সিবিলের মুখ।
‘কিছু ফেলে দিলেন, স্যার?’
হঠাৎ বলে উঠল কে যেন পেছন থেকে।
ঘুরতেই লর্ড আর্থার দেখলেন একজন পুলিশ, হাতে বুলস-আই লণ্ঠন (bull’s-eye lantern)।
‘গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, সার্জেন্ট,’ হেসে জবাব দিয়ে, পাশ দিয়ে যাওয়া একটা ক্যাবকে ইশারায় থামিয়ে, উঠে পড়লেন তিনি। চালককে বললেন বেলগ্রেভ স্কোয়ারে (Belgrave Square) নিয়ে যেতে।
পরবর্তী তিন দিন তিনি দুললেন আশা আর আতঙ্কের মাঝখানে। কখনও কখনও মনে হলো,
এই বুঝি এসে পৌছুলেন মি. পজার্স। দু’তিন বার গেলেনও তিনি ওয়েস্ট মুন স্ট্রীটে, কিন্তু বেল টেপার সাহস পেলেন না।
অবশেষে সংবাদ এল। ক্লাবের স্মোকিং-রুমে বসে চা খাচ্ছেন, এমন সময় ওয়েটার নিয়ে এল সান্ধ্য পত্রিকা। সেন্ট জেমসের একটা কপি নিয়ে তিনি পাতা ওলটাতে লাগলেন উদাসভাবে। হঠাৎ এই অদ্ভুত সংবাদটা চোখে পড়ল তাঁর ।
‘একজন হস্তরেখাবিদের আত্মহত্যা’
উত্তেজিত হয়ে পড়তে লাগলেন তিনি। সংবাদটা এরকমঃ .
গতকাল সকাল সাতটায় বিখ্যাত হস্তরেখাবিদ, মি. সেপটিমাস আর. পজার্সের লাশ পাওয়া গিয়াছে গ্রীনিচ উপকূলে শীপ হোটেলের ঠিক সম্মুখে। গত কয়েক দিন হইতেই হতভাগ্য ভদ্রলোকের খোজ পাওয়া যাইতেছিল না। ফলে তাঁহার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হস্তরেখাবিদ সম্প্রদায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন অবস্থায় কালাতিপাত করিতেছিল। করোনারের জুরির (coroner’s jury) মতে,
মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে সাময়িকভাবে মানসিক ভারসাম্য হারাইয়া তিনি আত্মহত্যা করিয়াছেন। মাত্র কিছু দিন আগে মি. পজার্স হস্তরেখা বিষয়ে একটি গবেষণা গ্রন্থ শেষ করিয়াছেন, যাহা অতি শীঘ্রই প্রকাশিত হইবে, এবং নিঃসন্দেহে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবে। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স হইয়াছিল পঁয়ষট্টি বৎসর,
যত দূর সম্ভব তাহার
কোন আত্মীয়-স্বজন নাই।
সংবাদপত্রটা হাতে নিয়েই ক্লাব থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন লর্ড আর্থার, সোজা রওনা দিলেন পার্ক লেনের দিকে। সিবিল দাড়িয়ে ছিল জানালার পাশে, তাঁকে ছুটে আসতে দেখে তার মনে হলো,
সংবাদ নিশ্চয়.শুভ। সে ছুটে গিয়ে লর্ড আর্থারের মুখোমুখি হতেই বুঝতে পারল,
সমস্ত বিপদ কেটে গেছে।
‘সিবিল, আমার সিবিল। চলো, আগামীকালই বিয়ে করি আমরা।’
‘বোকা ছেলে কেকটাও তো অর্ডার দেয়া হয়নি!’
হাসল সিবিল চোখ ভরা পানি নিয়ে।
ছয়
সপ্তাহ তিনেক পর যেদিন বিয়ে হলো সেদিন দামী পোশাকে সজ্জিত, চটপটে মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ল সেন্ট পিটার্স। অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেন ডীন অভ চিচেস্টার। অভ্যাগতরা বলাবলি করতে লাগলেন, এত সুন্দর জুটি তাঁরা কখনও দেখেননি। লর্ড আর্থারের চোখে-মুখে থই থই করতে লাগল সুখ। এই বিয়ের জন্যে যে-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, এক মুহুর্তের জন্যেও তা ভেবে কষ্ট পেলেন না তিনি, আর ভালবাসার প্রতিমূর্তি হয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে রইল সিবিল। বাস্তবতার কারনে তাদের ভালোবাসার মৃত্যু ঘটবে না।
কয়েক বছর পরের কথা। দুটো সন্তান হয়েছে তাঁদের। একদিন লেডি উইণ্ডারমিয়ার এলেন অ্যালটন প্রায়োরিতে (Alton Priory)। ছেলের বিবাহের উপহার হিসেবে এই বাড়িটা দান করেছেন ডিউক।তখন বিকেল। সিবিলের সঙ্গে বাগানে গিয়ে লেডি উইণ্ডারমিয়ার বসলেন একটা বাতাবি
লেবুর গাছের নিচে। ফুটফুটে শিশু দুটো ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে গোলাপঝাড়ের ফাঁকে ফাঁকে। একদৃষ্টে তাদের খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ সামনে ঝুঁকে পড়ে সিবিলের হাত দুটো জড়িয়ে ধরে লেডি উইণ্ডারমিয়ার বললেন, ‘সত্যি কি তুমি সুখী, সিবিল?’
‘নিশ্চয়। আপনি সুখী নন?
‘নাহ। জীবনে সুখী হবার সময়ই পেলাম না, সিবিল। সবসময় শেষ যার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাকেই ভাল লেগেছে আমার। কিন্তু তাদের ভালভাবে চিনতে পারার সঙ্গে সঙ্গে আর আগ্রহ বোধ করিনি। এটা যেন আমার জীবনের একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে।’
‘আপনার তো অনেকগুলো সিংহ ছিল,
সেগুলোও আপনাকে সুখ দিতে পারেনি?’
‘না,
না! সিংহ মাত্র একটা ঋতুর জন্যে ভাল। কেশর কেটে দিলে সিংহের চেয়ে বিশ্রী জানোয়ার খুব কমই আছে। তাছাড়া লক্ষ করেছি, সদয় হলেই ওরা দুর্ব্যবহার করে। মি. পজার্সের সংবাদ জানো?
ওটা একটা মহা ভণ্ড। সেই ভণ্ডামিও আমি মেনে নিয়েছিলাম, টাকা ধার চাওয়াতেও কিছু মনে করিনি, কিন্তু অসহ্য ওর প্রেম করার ঢং। প্রধানত সেই কারণেই ধীরে ধীরে হস্তরেখাবিদ্যার ওপর ঘৃণা জন্মাল আমার। ইদানীং আমার কি
ভাল লাগছে জানো?
টেলিপ্যাথি। দারুণ জিনিস! টেলিপ্যাথির মজার তুলনায় হস্তরেখাবিদ্যা কিছুই নয়,
সত্যি বলতে কি, একেবারে বাজে।’
‘এই বাড়িতে বসে হস্তরেখাবিদ্যার (কিরোম্যানসির) বিরুদ্ধে আপনার কিছু না বলাই ভাল, লেডি উইণ্ডরিমিয়ার। এই একটা বিষয়ে রসিকতা আর্থার একেবারেই পছন্দ করে না।’
‘তুমি কি বলতে চাও, হস্তরেখাবিদ্যায় তাঁর বিশ্বাস আছে?’
‘আমার জবাব দেয়ার প্রয়োজন নেই, কথাটা বরং ওকেই জিজ্ঞেস করুন।’ মুখ তুলতেই লেডি উইণ্ডারমিয়ার দেখলেন হলুদ গোলাপের বিরাট এক তোড়া নিয়ে বাগানের পথ ধরে এদিকেই এগিয়ে আসছেন লর্ড আর্থার সেভিল, আর তার দুপাশে নাচছে দুই ছেলে-মেয়ে।
‘লর্ড আর্থার?’
‘বলুন, লেডি উইণ্ডারমিয়ার।’
‘এ-কথা,
নিশ্চয় বলবেন না যে কিরোম্যানসি মানে জ্যোতিষশাস্ত্র আপনি বিশ্বাস করেন?
‘নিশ্চয় বিশ্বাস করি,’ বিদ্রুপের হাসি হাসলেন সুদর্শন যুবক। বিরক্তিভরা কণ্ঠে বললেন,‘আমার সারা জীবনের সুখের জন্যে যে ওই শাস্ত্রটির কাছেই ঋণী হয়ে আছি যে,’ একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়লেন লর্ড আর্থার।
‘কোন ঋণ,
মাই ডিয়ার?’
‘সিবিল (কে লাভ করার ঋণ),’ গোলাপের তোড়াটা স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে,
তার চোখে গভীর চোখ রাখলেন লর্ড আর্থার।
‘যত্তোসব বাজে কথা!’ মাটিতে পা ঠুকে চেঁচিয়ে উঠলেন, লেডি উইণ্ডারমিয়ার। ‘এই ধরনের বাজে কথা জীবনেও শুনিনি।’ (শেষ)
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে
সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে। বুখারী ৬৫৩৩; মুসলিম ১৬৭৮
No comments:
Post a Comment