![]() |
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের বিচার
|
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের বিচার
গিয়াসউদ্দিন বলবন বিশাল সাম্রাজ্যের
মালিক ছিলেন। তার সাম্রাজ্যের পশ্চিম সীমানায় বাদায়ুন নামক এক প্রদেশ ছিল। পাহাড়
আর মালভূমির দেশ এই বাদায়ুন। পাহাড়ের মাঝে ছিল বিস্তীর্ণ সুনীল উপত্যকা। পাহাড় থেকে নেমে আসে সফেদ ঝরনাধারা। আর এই ঝরনার পানি সবুজ উপত্যকার বুক
চিরে কলকল সুর তুলে এগিয়ে যায়। এই বাদায়ুনের
শাসনকর্তা ছিলেন মালিক ফয়েজ। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের পক্ষ থেকে তিনি বাদায়ুন
শাসন করছেন। এই রাজ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধির কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু এই আরাম-আয়েশ
তাকে ঠেলে দিলো বিলাসিতার দিকে। মদ্যপ হয়ে
উঠলেন তিনি। মদের নেশা তাকে নিয়ে গেল জঘন্য স্বেচ্ছাচারিতার দিকে।
এভাবে একদিন তার হাত নিরপরাধ মানুষের
রক্তে লাল হয়ে উঠল। মালিকের খিদমতের জন্য এক দাস ছিল। মালিক ফয়েজ একদিন মাতাল অবস্থায়
তাকে খুন করলেন। বিষয়টি তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করল। বাদায়ুনের মানুষের অনেক কণ্ঠই
এই খুনের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে চাইল। তারা এর প্রতিকারের
আশা করল। কিন্তু মদ্যপ শাসকের কাছে সুবিচারের কোনো সুযোগ নেই জেনে সবাই ধৈর্যধারণ
করল। ঘটনাক্রমে ঠিক এই সময় গিয়াসউদ্দিন বলবন
এলেন বাদায়ুনে। সংবর্ধনার আয়োজন করে মালিক ফয়েজ নিয়ে এলেন সুলতানকে। কিন্তু ফয়েজের
কথাবার্তা ও আচার-আচরণ দেখে সুলতান ক্ষুব্ধ হলেন। তা ছাড়া তিনি তাকে ভালো করেই
জানতেন।
পরদিন দরবারে বসলেন গিয়াসউদ্দিন
বলবন। উদেশ্য সাধারণ নাগরিকদের সাথে তিনি দেখা করবেন, তাদের
কথাবার্তা ও অভাব-অভিযোগ শুনবেন। একপর্যায়ে বোরখা পরা এক মহিলা এসে সুলতানের সামনে
দাঁড়াল। সুলতান তার কথা শুনতে চাইলেন।
মহিলা অভিযোগ করে বলল, তার
নির্দোষ স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন শাসনকর্তা মালিক ফয়েজ। মহিলার অভিযোগ শুনে গিয়াসউদ্দিন মুহূর্তকাল চুপ করে থাকলেন। পাশেই বসেছিলেন মালিক ফয়েজ। সুলতান মুখ
ঘুরিয়ে তাকালেন মালিক ফয়েজের দিকে। সুলতানের
মুখে কোনো কথা নেই। কিন্তু চোখে তার একরাশ প্রশ্ন। সুলতানের গভীর ও তীক্ষ্ণ
দৃষ্টির ঝলকে মালিক ফয়েজের অন্তরাত্মা কেপে উঠল। তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। কাঁপতে কাঁপতে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সুলতানের
অন্তর্ভেদী চোখের প্রশ্নের জবাবে ফয়েজের মুখ থেকে কোনো কথাই বেরুল না। কিন্তু তার
চোখে-মুখে ফুটে উঠল পাপের কালিমা রেখা।
সুলতান এবার ফরিয়াদি মহিলার দিকে
তাকালেন। বললেন, যাও
মা, তুমি চলে যাও। তোমার প্রত্যাশিত বিচার তুমি পাবেই, ইনশা আল্লাহ।
আল্লাহর আইনে কাজির আদালতেই এই বিচার অনুষ্ঠিত হবে। আমিই তোমার পক্ষে বাদি হয়ে আদালতে
গিয়ে দাঁড়াব।
সময়মত কাজীর আদালতে বাদায়ুনের শাষনকর্তা
মালিক ফয়েজের বিচার কাজ সম্পন্ন হলো। বিচারে ফয়েজের প্রাণ দণ্ডাদেশের রায় ঘোষণা
করা হলো। গিয়াসউদ্দিন বলবন নিজে দাঁড়িয়ে সে নির্দেশ কার্যকর করলেন।
- - - - - - - - - - - - - - - - - -
- - - - - - - - - -
১৭৮)
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য হত্যার ব্যাপারে কিসাসের বিধান লিখে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন
ব্যক্তি হত্যা করে থাকলে তার বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই হত্যা করা হবে, দাস হত্যাকারী হলে ঐ দাসকেই হত্যা করা হবে,
আর নারী এই অপরাধ সংঘটিত করলে সেই নারীকে হত্যা করেই এর কিসাস নেয়া
হবে। তবে কোন হত্যাকারীর সাথে তার ভাই যদি কিছু কোমল ব্যবহার করতে
প্রস্তুত হয়, তাহলে
প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী রক্তপণ
দানের ব্যবস্থা হওয়া উচিত এবং সততার সঙ্গে রক্তপণ আদায় করা হত্যাকারীর জন্য
অপরিহার্য। এটা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে দন্ড হ্রাস ও অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি
বাড়াবাড়ি করবে তার জন্য
রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১৭৯) হে বুদ্ধি – বিবেক সম্পন্ন লোকেরা! তোমাদের জন্য কিসাসের
মধ্যে জীবন রয়েছে। আশা করা যায়,
তোমরা এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে সতর্ক হবে। (সুরা আল বাকারাহ)
No comments:
Post a Comment