![]() |
মজার গল্প - দ্যা টাইগার - আখতার হুসেন- Funny Story - The Tiger - akhter Hossen |
খুব
সামনেই খোকনের বার্ষিক পরীক্ষা। আর মাত্র
মাসখানেকের মতো বাকি। তাই পড়াশোনার খুব তোড়জোড়। নিশ্বাস ফেলবার জো’টি নেই। ক্লাসে রটে
গিয়েছে,
এবার ইংরাজিতে বাঘ সম্পর্কে রচনা আসবে। সেই সাত-সাকলে তাই ও ইংরাজি রচনা বই খুলে বসেছে। বারবার পড়ছে- দি টাইগার
রচনা। কিন্তু পড়তে গিয়ে একটা অজানা ভয়ে ও শিউরে উঠছে বারবার। গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে উঠছে। কী ভয়ঙ্কর আর হিংস্র স্বভাবের
এই বাঘ! থাকে গভীর জঙ্গলে। অথচ ওর
মনে
হচ্ছিল, একটা
ডোরাকাটা বাঘ যেন তাদের বাড়ি আর বাগানের আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। লাল ভয়ঙ্কর দুটো
চোখ মেলে পায়তারা কষছে। যেন এক্ষুনি দরজা খুলে থাবা টাবা মেলে ওর সামনে এসে দাঁড়াবে।
ওদের
এত বড় বাড়িতে ও এখন একলা। কেউ নেই। আব্বা, মা-মণি আর বড়’পা গেছেন
নিউ মার্কেটে। প্রেজেন্টেশান
কিনতে। আগামী পরশ ছোট কাকার বিয়ে। তিনি নিজে এসে
ওদের সাবইকে দাওয়াত দিয়ে গেছেন। না গেলেই নয়।
ও
যখন বাঘ সম্পর্কে গভীর চিন্তায় মগ্ন, তখন ছোট মামা ঢুকলেন ঘরে।
প্রায় হস্তদন্ত হয়ে। ঢুকেই একটা চেয়ার টেনে ওর মুখোমুখি বসলেন, “কীরে, কারো
কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। বাড়িতে কেউ নেই?”
“না” ও
জবাব দেয়।
“তা, এত
মনোযোগ দিয়ে কী পড়ছিস?”
“বাঘ
সম্পর্কে।”
মামা
একটু অবাক হন। যেন আকাশ থেকে পড়েন। “বাঘ সম্পর্কে পড়ে
কী করবি?
“কী করব
মানে?
পরীক্ষায় আসবে। রচনা।” ও মামাকে বুঝিয়ে বলে।
মামা
ওর কথা শুনে একটুক্ষণ থ মেরে থাকেন। যেন মুখে কোনো কথা যোগাচ্ছে না।
ও
তখন বলে,
“আচ্ছা মামা, তুমি তো শিকার টিকার করো। কখনও বাঘ শিকার করেছ?”
“করিনি, তবে
খুব শিগগিরই করব”, মামা জবাব দেন।
“আচ্ছা মামা, বইয়ে
যে লেখা বাঘেরা খুব হিংস্র স্বভাবের ৷ সত্যি কি তাই?
”
মামা
ওর কথায় হোহো করে হেসে ওঠেন।
“সত্যি মানে, একশোবার
সত্যি।”
ও
এবার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে, “ঘাড় মটকে রক্ত খায়?”
“সামনে
একবার পড়েই দেখিস না!”
মামার
জবাব দেবার ধরনে ও আর প্রশ্ন করতে সাহস করে না। আবার দি টাইগার রচনায় মনোনিবেশ করে।
একটু
পরে মামা ওর সামনে থেকে উঠতে উঠতে বলেন, “খোকন, আমি
একটু বাইরে যাচ্ছি। পরে আবার আসব। তোর পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর
তোকে সঙ্গে করেই একদিন বাঘ শাকরে যাব।”
“সত্যি বলছ
মামা!” ও মুহুর্তে খুশি
হয়ে ওঠে।
“একেবারে
সদলবলে ৷ আটঘাট বেঁধে সুন্দরবনেই যাব। পরীক্ষাটা
ভালো করে দে।” কথা বলতে বলতে মামা ঘর থেকে বেরিয়ে
গেলেন।
আব্বু, মা-মণি
আর বড়পা’রা এখনও ফেরেননি। ছোট মামা গেছেন প্রায় ঘণ্টা- খানেক। আর ঘরের দরজায় খিল এঁটে ও তখন পড়ে চলেছে একমনে দি টাইগার। ঠিক এমন সময় বাইরের দরজার কড়া বেজে ওঠে। বাড়ির সবাই ফিরে এল বোধহয়। বই থেকে চোখ
তুলে পায়ে পায়ে দরজার কাছে এগিয়ে যায় ও। এবং দরজা খুলে দিতেই দেখতে পায়- আববু, মা-মণি,
বড়’পা নয়, ওর
সামনে দাড়িয়ে বাচ্চামতন অথচ মোটাসোটা, ডোরাকাটা একটা বাঘ।
“গুড মর্নিং
কেমন আছ?” ও কিছু
বলার আগেই সে তার সামনের একটা পা বাড়িয়ে দেয় ওর হাতের দিকে। করমর্দনের ভঙ্গিতে। যেন বাঘটা
ওকে অনেকদিন থেকেই চেনে।
ও
ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে এসে চোখ কচলাতে থাকে। ভুল কিছু দেখছে না তো? চোখে ঘোর লাগেনি তো। হঠাৎ ও স্বাভাবিক
হয় বাঘটির অট্টহাসিতে, “হাঃ.হাঃ হাঃ হাঃ হোঃ
হোঃ হোঃ - আমাকে ভয় পেয়েছ!”
ও
কী করবে,
কী করতে পারে, মাথায় কিছু ঢুকছে না। এ কী
বিপদ এসে জুটলো রে বাবা! বইয়ের পাতা ছেড়ে একটি তরতাজা জীবন্ত বাঘ যে ওর সামনে
এসে দাঁড়াবে, জীবনেও ভাবেনি। শিকারে গেলে বন-জঙ্গলে ওদের সাক্ষাৎ পাওয়া এক কথা, আর
নিজের ঘরের একেবারে দোরগোড়ায় ওদের মুখোমুখি হওয়া আরেক কথা।
“কী হল, কথা
বলছ না যে!” বাঘটা হঠাৎ ওকে চমকে দিয়ে প্রায়
ধমকে ওঠে,
“গুড মর্নিং
বললাম,
অথচ তুমি তার জবাবটাও দিলে না...”
থতমত
খেয়ে ও এবার কোনোমতে মুখ খোলে, “গুড মর্নিং...”
“আমাকে
এখানে এমনভাবে দেখে খুব অবাক হচ্ছ, তাই না?” বাঘটা
বললো।
“না না, অবাক
হব কেন? নিজেকে ও সামলে নেয়। ভয় পেলে আর দরজা খুলে তোমার
মুখোমুখি দাড়িয়ে থাকি?”
“তা হলে ভদ্রতা
করে ঘরে নিয়ে বসাবে তো” অনেকটা ঠাণ্ডা
গলায় বাঘটা বলে, “অতিথি এলে তাকে সমাদর করতে হয়।”
ও
এবার মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে। ভাবে, দেখিই
না কী হয়। দরজা খুলে দিতেই বাঘটা যখন ওকে আক্রমণ করেনি, ঘরে
ঢুকে কিছু করবার চেষ্টা করলে চিৎকার করে পাড়াপরশিদের অন্তত জড় করতে পারবে সে।
“এসো, ঘরে
এসো, ও বলে। বাঘটা ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢুকতেই ও দরজা বন্ধ করে দেয়।”
“তোমার
নামটা তো বললে না?” ঘরের ভেতরে ঢুকে
ওর প্রথম প্রশ্ন। নাম কী তোমার?”
“আমার নাম
খোকন।”
“আমার নাম
শান্ত। বাবা-মা অবিশ্যি আমার নাম রেখেছিল হালুম, কিন্তু
আমার পসন্দ হয়নি।”
“কেনো?
কেনো?”
“ওটা আবার
একটা নাম হল নাকি! হালুম, খালুম - বড্ড পুরনো সব নাম।”
“তা এখন
তুমি এলে কোথা থেকে?”
“তাও জানো
না?”
“আমি জানব
কী করে?”
“বুঝলে, আমি
এলাম আমাদের গা থেকে।”
“তোমাদের গা, সে
আবার কোথায়?”
“কেন
সুন্দরবনে, নাম শোননি?”
“শুনেছি। তা
পথে কেউ বাঁধা দেয়নি?” অ প্রশ্ন করে, “কোনওরকম
অসুবিধে হয়নি তো?”
“একটু-আধটু
যে হয়নি,
তা নয়। শহরের সীমানায় পা রাখতেই ভোর হয়ে গেল।”
“তারপর?” ওর উৎকণ্ঠা
বেড়ে চলে।
“তারপর আর
কী? লোকজন আমাকে আলোতে দেখতেই যে যেদিকে পারল, পড়ি- মরি
করে ভোঁ দৌড়। আমি যতই বলি আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কে
শোনে কার কথা! দু’একজন অবশ্য গুলি
ছুড়েছিল।”
“কোথাও
লাগেনি তো?”
“না, লাগাতে
পারেনি। ভীষণ গা বাচিয়ে
চলেছি।”
“তোমার
ভাগ্য সত্যিই ভালো।”
এরপর
ওরা দু'জনেই চুপচাপ। বাঘটাকে আর কী বলতে বা জিজ্ঞেস করতে পারে, ভেবে পায় না ও। কিন্তু এই নীরবতার সুযোগে বাঘটাকে ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
দেখে নেয়। যাতে বাঘের রচনা এলে, বাঘের বাইরের চেহারার একটা
নিখুত বর্ণনা পরীক্ষার খাতায় দিতে পারে। কিন্তু এ অবস্থায় হঠাৎ করেই বাঘটা
নীরবতা ভেঙে বসে, “তোমাদের বাড়িতে
আর
কেউ নেই?”
“আছে মানে, সবাই
আছে?”
“পরিচয়
করিয়ে দেবে না?”
“বাইরে একটু
কাজে গেছে কিনা, ফিরলে নিশ্চয়ই করিয়ে দেব। এখুনি হয়তো ফিরে আসবে। তা তোমার কে কে আছে, তা তো বললে না?”
“মা আছে, বাবা
আছে।”
“আসবার সময়
তাদের বলে আসনি?”
“বলে আসব
কেন?”
“মানে, মা-বাবার
কথা মেনে চলতে হয় বলে।”
“আমার সঙ্গে
ওদের কোনো ভাব নেই।”
“কেন, কেন?”
“ওরা বন
ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না বলে, আমাকে ওদের মতো করে চলতে বলে, বলে,” বাঘটা এবার একটা
হাই তোলে,
“তোমার
মা-বাবা নিশ্চয়ই খুব ভালো?”
“ভালো-মন্দ
বুঝি না,
তবে আমি যা করতে চাই, ভালো মনে করলে, তারা তাতে বাধ সাধে না।”
“আহা, আমার.মা-বাবা
যদি তোমার মা-বাবার মতো হত, বাঘটার গলায় আক্ষেপের সুর।”
টুকটাক
করে আর কিছুক্ষণ কথা বলার পর বাঘটা বারবার হাই তুলতে থাকে। বড্ড ক্লান্ত দেখায় তাকে। চোখ দুটো
প্রায় মুদে আসছে। ও বলে, “তোমার বোধহয় ঘুম পাচ্ছে। ক্লান্ত বোধ করলে
একটুখানি ঘুমিয়ে নিতে পারো।”
“না, ঘুমুলে
চলবে না ভাই। আমাকে ঘুরেফিরে
তোমাদের সবকিছু আবার দেখতে হবে কি না। তবে খাবার থাকলে একটুখানি দিতে পারো, যদি
কোনোরকম অসুবিধে না হয়।”
“না না
অসুবিধে হতে যাবে কেন?”
“তাহলে
নিয়ে এসো। খিদেটা বেশ লেগেছে।”
“কিন্তু
তুমি যখন আমার মেহমান, তোমাকে তো আর অমি যা-তা একটা-কিছু খেতে দিতে
পারি না?”
“তুমি অতসব
বাদ দাও তো। যা হয় একটা-কিছু হলেই আমার চলে যাবে।”
ও
আর কোনো কথা বাড়াতে সাহস করে না। তাড়াতাড়ি-ছুটে যায় রান্নাঘরে। মিটসেফের কাছে। মিটসেফ খুলতেই চোখে পড়ে রান্না করা মাংসের
একটা পাতিল আর একটা প্লেটে রাখা খানকয়েক রুটি। সাকলের নাশতা সেরে বেঁচে যাওয়া। তাড়াতাড়ি
হাত চালিয়ে একটা প্লেটে চারখানা রুটি সাজায় ও। আর একটা চীনা মাটির বাটিতে তুলে
নেয় আট-দশখণ্ড মাংসের টুকরো। সেইসাথে
ঝোল। ও জানে না, বাঘটা রুটি খাবে কি না, কিন্তু মাংস
নিশ্চয়ই ওর সেরা খাদ্য।
রুটি
আর মাংস নিয়ে পড়ার ঘরে ঢুকতেই দেখতে পায়, চেয়ারে হেলান দিয়ে বাঘটা নাক
ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে। ও ডাকে, “এই, এই
যে ওঠো।”
বাঘটা
বড়মতো একটা হাই তুলে চোখ কচলে তাকায়। ও বলে, “রুটি আর মাংস খেতে
তোমার আপত্তি নেই তো?”
“আর
অন্যকিছু নেই?” মুখের ভাব তেতো করে ও এবার আরও একটা
হাই তোলে।
“মাংস খেতে
আর ভালো লাগে না। বলতে পারো ছেড়েই দিয়েছি।”
“বলো কী!” ও অবাক
হয়। “আমি তো জানি মাংস তোমাদের সরচেয়ে প্রিয়
খাবার।”
“আমার
মা-বাবার কাছে অবশ্য এখনও মাংসই একমাত্র প্রিয় খাবার কিন্তু আমি আর খাই না, সে
কাঁচাই হোক আর রান্না করাই হোক।”
ও
মহামুশকিলে পড়ে! ওকে এলোপাতাড়ি প্রশ্ন করতে শুরু করে।
“তা হলে কী
খাবে?
পায়েস, লুচি, ডালপুরি?”
“না, ওসব
কিচ্ছু না।”
“জিলিপি, গরম
গরম?”
“না।”
“সন্দেশ, রসগোল্লা?”
“না।”
“কালোজাম, দই,
রসমালাই?”
“না।”
“আমড়া, জান্কুরা,
কামরাঙ্গা, কাচা আম?'
“কাঁচা-পাকা
ওসব কিচ্ছ না।”
“তা হলে
বিস্কুট,
চকলেট, টফি, চুয়িংগাম?”
“বললাম তো
ওসব কিচ্ছ না।” বাঘটা এবার নড়েচড়ে বসে। বোঝা যায়, ওর মেজাজ খিচড়ে গেছে। একটুক্ষণ ওর মুখের
দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আবার মুখ খোলে, “পান্তাভাত
আছে?”
“পান্তাভাত!” খোকনের
আবার অবাক হবার পালা।
“হ্যা, পান্তাভাত,
কাঁচামরিচ আর লবন। থাকলে ঝটপট নিয়ে আসো। খেয়েদেয়ে চলে যাই।”
ও
আবার ছোটে রান্নাঘরের দিকে। মিটসেফ খুলে ভালো করে খুঁজতেই পেয়ে যায় একটা
গামলাভর্তি পানি-দেয়া ভাত। রাত্রের
বেঁচে যাওয়া। ইতিউতি তাকাতেই
মিটসেফের পাশে রাখা একটা ঝুড়িতে পেয়ে যায় গোটাকয়েক কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ। সেইসাথে পানিভাতে ঢেলে দেয় পরিমাণমতো লবণ। তারপর ছুটে আসে ওর কাছে।”
“কী, পান্তাভাত
পেলে?”
“তোমার
ভাগ্য ভালো। দ্যাখো তো, এতে
তোমার চলবে কি না?” বাঘের সামনে তুলে
ধরে পান্তাভর্তি গামলাটা। তাই দেখে মুহুর্তে -ওর মুখটা খুশিতে লাল হয়ে ওঠে। ও হাফ
ছেড়ে বাচে।
অল্পক্ষণের
মধ্যেই পান্তাভর্তি গামলাটা চেটেপুটে বাঘটা, খালি করে ফেলে। তারপর মুখে তৃত্তির হাসি টেনে বলে, “অনেকদিন পরে খুব
মজা করে খেলাম।”
“পেট ভরেছে
তো?” ও জিজ্ঞেস
করে।
“ভরেনি মানে, আর
কত খাব? আমি কি রাক্ষস, নাকি?” কথা বলতে
বলতেই ও উঠে দাঁড়ায়, “এবার আমাকে যেতে হবে ভাই।”
“চলে যাবে?”
“হ্যাঁ, যেতেই
হবে। দেরি করলে আবার অনেক-কিছু দেখা হবে না কিনা। তোমাদের শহরটা তো আর কম বড় নয়। চলো, তুমি আমাকে একটু এগিয়ে দেবে।”
ও
বাঘটার পেছন পেছন যেতে থাকে। দরজা খুলে
বাইরে বেরিয়ে আসে ওরা। পথে নেমে দেখে, ওদের
গলিতে লোকজনের কোনো চলাচল নেই। কিন্তু
এমনটা তো হবার কথা নয়। একটু ভালো করে চোখ বুলোতেই দেখে, আশপাশের
বাড়ির দরজা-জানালাগুলোর ফাক-ফোকড়ে কিছু চোখের উপস্থিতি। কৌতুহলী চোখের দৃষ্টি ওর
আর শান্তর দিকে। সেইসঙ্গে একটা হিমশুন্যতা। তার মধ্য থেকেই কানে আসে চাপা ফিসফাস ও
গুঞ্জনের শব্দ। শান্তকে ও কী বলবে বা কী বলতে পারে, ভেবে
পায় না। বাঘটা বোধহয় ওর অবস্থা আঁচ করতে পেরেই মুখ খোলে, “তোমাদের
গলিটার অবস্থা দেখেছ?”
“দেখতে
পাচ্ছিই।” ও বলে।
“সবাই কেমন
ভীতু,
তাই না?”
“ব্যাপারটা
স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক দুটোই।”
“কেন কেন?”
“যেমন ধরো, তুমি
আমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছ। ঘরের মধ্যেও ছিলে কিছুক্ষণ। তার পরও আমি অক্ষত অবস্থায়
আছি, সেটা দেখেও তো ওরা ওদের ভয়টা দূর করতে পারে।”
শান্ত
এবার হেসে বলে, “আমাদের সম্পর্কে ওদের ভয়টা অনেক
দিনের। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেটা কাটবে কী করে? না ভাই, কথা বাড়ালেই বাড়বে। আমি তা
হলে যাই এবার। তোমার মা-বাবার সঙ্গে দেখা হল না। বেশ খারাপ লাগছে। তুমি তাদেরকে
আমার সালাম দিও?”
ও
ঘাড় নাড়ে, “দেব। তোমার সঙ্গে তা
হলে আর দেখা হচ্ছে না?”
“কেন হবে
না! তোমার কথা যখুনি মনে হবে, ধা করে চলে আসব। যাই।”
“যাও।
কিন্তু সাবধানে। আমাদের শহরে
চলাফেরার কোনো অসুবিধে হলে তুমি আমার নাম কোরো।”
“ঠিক আছে, বিদায়”, বাঘটা
হাত নাড়ে।
“বিদায়”, ও-ও
হাত নাড়ে। দেখতে দেখতে শান্ত
একটা গলির মোড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
সারাদিন
আর পড়ায় মন বসে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আব্বু, মা-মণি আর বড়পা’রা ফিরে
এলেন। তাঁদেরকে শান্তর কথা অর্থাৎ বাঘটার কথা বলল ও সবিস্তারে। কিন্তু তারা কেউই
ওর কথা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। উল্টে আরও দিলেন ধমকে। এল পাড়া-প্রতিবেশীরা। খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে জানতে চাইল তারা, বাঘটা ওর সঙ্গে কী কী বলেছে –তার বিস্তারিত
বর্ণনা। সন্ধ্যাবেলা মামা এলেন। তিনিও সব ব্যাপার শুনে-টুনে ঘরফাটানো হাসিতে ভেঙে
পড়েন,
“বাঘের রচনা পড়তে গিয়ে তোর মাথাটাই শেষ পর্যন্ত বিগড়ে গেছে।”
ও
এখন বিরক্ত। শান্ত সম্পর্কে ও আর কারও কাছে কিছু বলতে চায় না বা শুনতেও চায় না।
তারপর
শুরু হল পরীক্ষা। ইংরেজির
প্রশ্নপত্রে সত্যি সত্যি দি টাইগার রচনা এল। কিন্তু বাঘ সম্পর্কে বইয়ে যা যা ও
পড়েছে,
তার একটা অক্ষরও ওর পরীক্ষার খাতায় লিখতে ইচ্ছে হল না।
ও
লিখল,
“বাঘ অত্যন্ত নিরীহ-শান্ত জীব। কোনো কোনো বাঘের নামও রাখা হয় শান্ত। আর বাঘেরা মোটেই হিংস্র নয়। তাহাদের অনেকেই মাংস খেতেও পছন্দ করে না। কেহ
কেহ মরিচ দিয়া পান্তাভাত খায়। অনেক বাঘ মানুষের সঙ্গে দেখা হইলে গুড মর্নিং বলে
করমর্দনের জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয়...........................।”
এডিটঃ মারুফ আল মাহমুদ
-
- - - - - - - - - - - - - শেষ - - - - - - - -
- - - - - -
রাসুল (সাঃ) এর উপর সর্বপ্রথম সুরা আলাক নাজিল হওয়ার পরে তিনি ভয়ে
কাপতে লাগলেন ও তাঁর স্ত্রী খাদিজাহ (রাঃ) কে বললেন তাকে চাদর দিয়ে আবৃত করতে।
তিনি (সাঃ) নিজের জীবন নিয়ে শংকার কথা জানালে, খাদিজাহ (রাঃ)
বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ্ আপনাকে (সাঃ)
কখনও লাঞ্ছিত করবেন না। (কারন) আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায়
দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের
আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (সহীহ মুসলিম - সংক্ষেপিত
- লিঙ্কঃ মুল হাদীস)
No comments:
Post a Comment