![]() |
খণ্ডচিত্র - ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে - শরীফ-উজ-জামান স্বপন - পর্ব ২ |
বাংলাদেশের কিছু অভিজ্ঞতাঃ
(১)
সিরাজগঞ্জ শহরে তখন শত শত ট্রাক পাথর এনে যমুনা নদীর তীরে ফেলছে পরে নৌকায় ওপারে ব্রিজ এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। HAM-এর এক বিদেশি ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করার জন্য দুপুরের পর ওইরকম এক পাথরবাহী নৌকায় পার হলাম এবং বিকেলে ওই রকম খালি নৌকায় ফেরৎ আসছিলাম। অনেক শ্রমিক কাজ শেষে ফিরে আসছে-আবার কাল সকালে যাবে। একটু ভাল করে বসার জন্য পাশেই রাখা এক শ্রমিকের এক বাটির টফিন বক্স সরাতে গিয়েই চমকে উঠলা,
এত্তো ভারী! কিন্তু এখন তো খালি থাকার কথা। পীড়াপীড়ি করতেই খুলে দেখাল-প্রকাণ্ড এক স্টীলের, নাট! এটা গলিয়ে দুটো ভাল কুড়াল বানানো যায়!
(২)
প্রায়ই চোখে পড়ে কোনও এক গৃহবধূ বা বৃদ্ধা মহাসড়কের পাশে ঝাড় দিচ্ছে। ভাবছেন দেশপ্রেম থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মহান স্বেচ্ছাশ্রম? আমিও তাই ভাবতাম, অন্তত সেদিন পর্যন্ত, যেদিন আমি বগুড়া থেকে বন্ধুর সঙ্গে গাড়িতে আসছিলাম। ওই রকম এক বৃদ্ধাকে দেখে গাড়ি থামাতেই সে তড়িঘড়ি করে চলে যেতে উদ্যত হলো। দৌড়ে পথ আটকাতেই তার কাঁদো কাঁদো চেহারা হলো। কাধে বাঁশের ঝুড়ি ভর্তি মুড়ো ঝাঁটা দিয়ে রাস্তার পাশ থেকে খসানো খোয়া!
জিজ্ঞেস করতেই বলল, টেকির গলুই ভাইঙ্গা গেছে, একটু সিমিট (সিমেন্ট) দিয়া লাগামু। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি ভঙ্গীমায় পালিয়ে বাচল।
এই সময় আর এক মহিলা ছাগল নিয়ে যাচ্ছিল, তার সত্যতা যাচাই করার জন্য সব কথা বলতেই সে
ফোস করে জ্বলে উঠল, ওই বুড়ি এক নাম্বারের চোর। ওর জ্বালায় একটা ইটও রাখা যায় না। ওর বাড়িতে চলেন-রাজ্যের ভাঙা ইট আর খুয়া! তিরিশ-পয়ত্রিশ টাকা ঝুড়ি বেচে!
(৩)
যমুনা ব্রিজ হবার বেশ ক’বছর পর ব্রিজের পশ্চিম পাশে এক গ্রাম্য সচ্ছল লোকের বাড়ি গেছি। টিনের ঘর কিন্ত পাকা মেঝে। মেঝেতে এক কালারের পুরু কার্পেট। ঠিক চেনা চেনা লাগলেও চিনতে পারলাম না। সম্ভবত প্লেনের ফ্লোরে বিছানো হয়।
আমার উৎসুক দৃষ্টি দেখে গৃহকর্তা বলে উঠলেন, ঠিকই ধরছেন। জিনিস বটে। ১০০ বছরের গ্যারান্টি। পানির
মধ্যে থাকলে। শুকনায় ৫০০ বছর। ব্রিজ করার জন্যে নদীর পারে পাতার জন্যে বিদেশী মাল।
বাঙ্গালী লেবাররা অর্ধেক পাতছে আর অর্ধেক নদীতে ডুবাইয়া রাখছে। রাইতে যাইয়া তুইলা আনছে। এই টুকরা (আনুমাণিক ২০ ফুট গুণ ১৫ফুট) ৫০০ চাইছিল, ২০০ দিছি।
(৪)
রোজার ছুটিতে প্রায় মাস খানেক উত্তর ভারতে ঠাণ্ডায় প্রায় জমে গিয়ে ২৫/২৬ রোজার দিকে বর্ডার পার হয়ে দর্শনা স্টেশনে পৌছলাম। ট্রেনের সময় পার হয়ে যাচ্ছে অথচ টিকিট কাউন্টারে লোক নেই। উনি
বাইরে রোদ পোয়াচ্ছেন। প্রথমে টিকিট দিতে উঠতেই চাইলেন না। ট্রেনে উঠে টিকিট
ম্যানেজ করলেই হবে।
ট্রেনে-এ উঠে টিটিকে ম্যানেজ করলেই হবে। পীড়াপীড়িতে উঠলেন এবং বিরস বদনে আড়াই টিকিট দিলেন।
ঈদের কয়েকদিন আগে, তাই চিনি ও গরম মশলার চোরাকারবারীদের ঠ্যালায় বুফে কারে উঠতে বাধ্য হলাম। বয়স্ক টিটিই এসে একে ওকে টিকিট দেন, টিকিট দেন বলতে লাগলে, সবাই কমপক্ষে ৫ টাকা এবং কেউ কেউ ২০ টাকা দিতে লাগল। টিটিই সাহেব, ‘এ টাকাতে’ হবে না, আরও দিতে হবে বলতে বলতে পকেট পূর্ণ করে পাশের কামরার দিকে এগুলেন। একমাত্র আমাদের কাছে এসে টিকিট চাওয়া তো দূরের কথা-চোখ তুলেও একবার দেখলেন না!
ঈশ্বরদী পৌছবার আগেই ইফতারির সময় হলো। ওই টিটিই সাহেব এলেন এবং একটা টেবিলে গামছা পেতে নিয়ে ডাব,
কলা ইত্যাদি (হকারদের নিকট থেকে আদায় করা নিশ্চয়ই) এবং বুফে কারের গরম গরম চপ, পিয়াজু ও ছোলা নিয়ে বসলেন।
বড়ই ইচ্ছে হচ্ছিল, টান মেরে ওই গামছাসহ ঐ ইফতারি ফেলে দিয়ে
বলি, তোমার জন্য এই ইফতারি নয়!
শেষ কথা
ভাঙা চোরা অস্ত্র আর আলসে,
ভীতু ও লোভী সৈন্য নিয়ে যেমন যুদ্ধজয় সম্ভব নয়,
ঠিক তেমনিই অন্তত বাঙালিদের নিয়ে বা দিয়ে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। মাফ করবেন-দয়া করে ভুল বুঝবেন না। বাঙালিদের খাটো বা অপমান করার সাহস,
স্পর্ধা বা ইচ্ছা-কোনটাই আমার নেই। তা ছাড়া আমার সাতকুলের সব্বাই বাঙালি-আমিও আপনাদেরই লোক। নিজের পেটের ছেলের দুব্যবহারে মা যেমন অন্যদের কাছে ওইসব লজ্জার কথা বলে,
কেঁদে একটু হালকা হতে চান-ঠিক তেমনি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছু কথা বলে বুকটা হালকা করতে চাইলাম।
মারুফ আল মাহমুদ
- -- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
- -- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেনঃ ঘুষ দাতা ও গ্রহিতা – উভয়ের উপর আল্লাহ লানত (গজব) দেন।
No comments:
Post a Comment