![]() |
খলিফা আল-মনসুরের ন্যায়পরায়ণতা - Sultan Al Mansur |
খলিফা
আল-মনসুরের ন্যায়পরায়ণতা
স্পেনের
নাবালক সুলতান দ্বিতীয় হিশামের সময় রাজ্যের প্রকৃত শাসক ছিলেন আল-মনসুর। তাঁর
কৃতিত্বের জন্য ঐতিহাসিকরা তাকে দশম শতাব্দীর বিসমার্ক বলে অভিহিত করেছেন।
ঐতিহাসিক ডোজি বলেছেন, ‘শুধু দেশ নয়; সভ্যতাও
তার কাছে ঋণী।’
আল-মনসুর
ন্যায়বিচারক হিসেবে ছিলেন সুবিখ্যাত। বিচারের বেলায় তিনি ব্যক্তিকে দেখতেন না, দেখতেন
ন্যায়নীতিকে। একদিনের এক ঘটনা। একজন সাধারণ নাগরিক সুলতান আল-মনসুরের কাছে গিয়ে
এক অভিযোগ পেশ করল। সে বলল, ‘হে ন্যায়বিচারক!
আপনার ঢালরক্ষক আমার সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। বিচারের জন্য কাজির এজলাসেও তাকে
হাজির করা যায়নি।’
এ
কথা শুনে আল-মনসুর চিৎকার করে উঠলেন। তিনি বললেন, ‘কী! এত বড়
স্পর্ধা! ঢালরক্ষক কোর্টে হাজির হতে অস্বীকার করেছে? আর কাজিও কি তাকে
হাজির হতে বাধ্য করেনি?’
তাই
আল-মনসুর ঢালরক্ষককে নির্দেশ দিলেন, তুমি কাজির দরবারে গিয়ে
হাজির হও। তারপর তিনি পুলিশের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই দুই লোককে
কাজির দরবারে নিয়ে যাও। কাজিকে গিয়ে বল, আমার ঢালরক্ষক
একজনের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে, তার উপযুক্ত শাস্তি আমি চাই।
খলিফার আদেশ অনুযায়ী তাই করা হলো। কাজির বিচারে বাদি লোকটি অবশেষে তার মামলায়
জিতে গেল। তাই সে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আল-মনসুরের কাছে গিয়ে হাজির হলো।
আল
মনসুর বললেন, ‘তোমার ধন্যবাদ থেকে আমাকে রক্ষা কর।
এটা খুবই ভালো খবর যে, তুমি তোমার মামলায় জিতেছ এবং এতে তুমি
সন্তুষ্ট হতে পেরেছ। কিন্তু আমি মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমার অধীনে চাকরিতে
থেকে যে ঢালরক্ষক আইন লঙ্ঘন করেছে, তার শাস্তি এখনও বাকি
আছে।’
৭৭৫
খ্রিষ্টাব্দের কথা। খলিফা আল-মনসুর রাজধানী বাগদাদ থেকে মদীনায় এলেন। তখন
মুহাম্মদ বিন ইমরান মদীনায় কাজির আসনে সমাসীন ছিলেন। কাজি একদিন তার বিচারাসনে
বসেছিলেন। এমন সময় একজন উটচালক আদালতে এসে হাজির হলো। সে খলিফার বিরুদ্ধে একটা
অভিযোগ উত্থাপন করে সুবিচার প্রার্থনা করল। অভিযোগ শুনেই কাজি তাঁর সহকারীকে ডেকে
পাঠালেন। তাকে খলিফার নামে কোর্টে হাজির হবার সমন পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। কিন্তু
সহকারী এই আদেশের ব্যাপারে একটু নমনীয় হবার জন্য কাজিকে অনুরোধ করলেন। কাজি তাতে
রাজি হলেন না। অবশেষে সহকারী খলিফার কাছে লিখিত সমন পাঠালেন।
খলিফা
আলমনসুর কাজির সমন হাতে পেয়ে তা পড়ে সভাসদদের ডেকে তাদের সাথে বসলেন। তিনি বললেন, কাজির
আদালত থেকে সমন পেয়েছি। আমি সেখানে যাচ্ছি, তোমরা কেউ আমার
সাথে যাবে না। এটা আমার ইচ্ছা। নির্দিষ্ট দিন খলিফা যথাসময়ে কাজির আদালতে গিয়ে
হাজির হলেন। আদালতে খলিফাকে কাজি দেখতে পেলেন। কিন্তু তিনি তাঁর আসন থেকে উঠলেন
না। তিনি খলিফার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই করলেন না, বরং তিনি
আপন মনে তার কাজ করে যেতে লাগলেন।। খানিকক্ষণ পর খলিফার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের
বিচার কাজ শুরু হলো। কাজি সাহেব বাদি ও বিবাদির পক্ষ থেকে তাদের বক্তব্য শুনলেন।
তারপর রায় ঘোষণা করা হলো। তবে কাজির বিচারে রায় গেল খলিফা আল-মনসুরের বিরুদ্ধে।
এদিকে রায় শুনে খলিফা আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। তিনি কাজিকে উদ্দেশ করে বললেন,
এ রায়ের জন্য আল্লাহপাক আপনাকে পুরস্কৃত করুন। আর আমি নিজে আপনার
জন্য ১০ দিরহাম (স্বর্ণমুদ্রা) পুরস্কারের ঘোষণা করছি। কী মহান মনের মানুষ ছিলেন
সুলতান আল-মনসুর। সুলতান হয়ে নিজে আদালতে হেরে গিয়ে কাজিকে পুরস্কৃত করলেন।
আজকাল এই ধরনের মহান হৃদয়ের মানুষ নেই বললেই চলে।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
Kub balo
ReplyDelete