![]() |
শিক্ষামূলক ও মজার ঘটনা - ইমাম আবু হানীফার (রঃ) এর জবাব |
শিক্ষামূলক
ও মজার ঘটনা - ইমাম আবু হানীফার (রঃ) এর জবাব
রোমের
বাদশাহ কায়সার।
তার বড় অহংকার। তার জাতির অহংকারও তার চেয়ে কম নয়। তাদের অনেক জ্ঞান। তারা অনেক লেখাপড়া জানে। তাদের বুদ্ধি অনেক। তারা দর্শন, তর্কশাস্ত্র
অনেক কিছুই জানে। বুদ্ধি ও তর্কশাস্ত্রের
যুক্তির জোরে তারা দিনকে রাত ও রাতকে
দিন করে দিতে পারে। আর আরবের মুসলমানরা? তারা
কী-ই বা
জ্ঞান রাখে! কতটুকুই
বা বুদ্ধি তাদের! তলওয়ারের
জোরে তারা দুনিয়া জয় করে ফিরছে। কিন্তু বুদ্ধি আর জ্ঞানের বহর তাদের কোথায়? এই
শক্তি দিয়েই এবার তাদের হারাতে হবে। কায়সার তার বুদ্ধিমান উজিরের সাথে বসে পরামর্শ করেন। যুক্তি আঁটেন। ঠিক হয় বুদ্ধিমান উজির যাবেন বাগদাদে মুসলমানদের বাদশার দরবারে। সেখানে তিনি ভরা দরবারে মুসলমান আলেম, জ্ঞানী, গুণী ও পন্ডিতদের
তিনটি প্রশ্ন করবেন। যদি তারা প্রশ্ন তিনটির সঠিক জবাব দিতে না পারে তাহলে মুসলমানদের বাদশাহ মনসূর রোমের বাদশাহ কায়সারকে কর আদায় করবেন।
রোমের
বুদ্ধিমান উজির বাগদাদে বাদশাহ মনসূরের দরবারে আসেন তিনটি প্রশ্নের প্রস্তাবটি দেন। বাদশাহ
মনসূর তার প্রস্তাব মেনে নেন। বাদশাহ মনসূর জ্ঞানী গুণীদের জমায়েত করেন। নির্দিষ্ট দিনে মানুষের ভীড় জমে ওঠে দরবারে। রোমের বুদ্ধিমান উজির একটি আসনে বসেন। তিনি প্রশ্ন করতে থাকেন। বিভিন্ন আলেম ও জ্ঞানী
লোকেরা তার জবাব দিতে থাকেন। কিন্তু কোন জবাবেই তাঁকে ঠেকানো যায় না। কোন জবাবই রোমের বুদ্ধিমান উজিরের মুখ বন্ধ করতে পারে না। এ অবস্থা
দেখে অবশেষে ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহ আলাইহি (নোমান ইবনে সাবিত)
উঠে দাঁড়ান। তিনি দরবারে বসেছিলেন। কিন্তু এ পর্যন্ত
কোন কথা বলেননি। এবার তিনি বাদশাহ মনসূরের কাছে কথা বলার অনুমতি চান। বাদশাহ তাঁকে অনুমতি দেন। ইমাম আবু হানিফা (র) রোমের উজিরকে বলেনঃ আসলে আপনি তো এখন প্রশ্নকারী আর আমি জবাব দাতা। কাজেই উঁচু আসনে প্রশ্নকারীর নয় জবাব দানকারীর বসা উচিত। বাদশাহ মনসূর ইমামের এ কথা
সমর্থন করেন। ফলে ইমাম আবু হানিফার দাবী অনুযায়ী রোমের বুদ্ধিমান উজির উঁচু আসন থেকে নেমে আসেন এবং ইমাম আবু হানিফা সেখানে উঠে বসেন। মঞ্চের এই নাটকীয় পট পরিবর্তনে সমস্ত প্রতিযোগিতার পরিবেশই পালটে যায়। ইমাম আবু হানিফা রোমের উজিরকে বলেনঃ এবার তোমার প্রশ্ন বলতে থাকো।
রোমের
উজিরঃ আমার প্রথম প্রশ্ন, আল্লাহর
আগে কি ছিল?
ইমাম
আবু হানিফাঃ তুমি এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ ইত্যাদি নিশ্চয়ই গুণতে পারো।
তাহলে আমাকে একটু বলো, একের
আগে কোন সংখ্যা আছে?
রোমের
উজিরঃ একের আগে কোন সংখ্যাই নেই।
ইমাম
আবু হানিফাঃ তাহলেই বোঝো, এক
তো অংকের একটা সংখ্যা মাত্র! তুমিই
বলেছো একের আগে আর কোন সংখ্যা নেই। তাহলে বলো, আল্লাহ
যিনি আসলে এক তার আগে কোন কিছু কেমন করে থাকতে পারে?
রোমের
উজিরঃ আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, আল্লাহর
মুখ কোন দিকে?
ইমাম
আবু হানিফা : প্রথমে
এ কথার জবাব দাও, প্রদীপের
আলোর মুখ কোন দিকে?
রোমের
উজিরঃ চারদিকে।
ইমাম
আবু হানিফাঃ তাহলেই বোঝো, আগুন
একটা সাময়িক আলো।
তার মুখের জন্যে কোন একটা বিশেষ দিক নির্দিষ্ট নেই। তাহলে বলো আসল নূর ও আলো
যে আল্লাহ তার জন্যে কেমন করে একটা বিশেষ দিক নির্দিষ্ট করা যেতে পারে?
রোমের
উজিরঃ আমার তৃতীয় প্রশ্ন, আল্লাহ
এখন কি করছেন?
ইমাম
আবু হানিফাঃ আল্লাহ এখন যে সমস্ত কাজ করছেন তার মধ্যে একটি কাজ হচ্ছে এই যে, তিনি
তোমাকে উঁচু আসন থেকে নামিয়ে আমাকে সেখানে বসিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাকে নামিয়ে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
রোমের
বুদ্ধিমান উজিরের মুখ একদম বন্ধ হয়ে গেলো।
তার মাথা হয়ে গেলো হেট। এই সংগে রোমের বাদশাহ কায়সার ও তার
জাতির সব অহংকার লুটিয়ে পড়লো ধুলায়। আসলে এটা ইমাম আবু হানিফার বা মুসলমানদের বিজয় ছিল না। এটা ছিল সত্য ও ইসলামের
বিজয়। এভাবে সব সময়ই অসত্য সত্যের কাছে হেরে গেছে। মিথ্যার অহমিকা ধূলোয় মিশে গেছে। আর তার মধ্য থেকে দীপ্ত হয়ে উঠেছে সত্যের উজ্জ্বল শিখা।
No comments:
Post a Comment