![]() |
শিক্ষামূলক মজার গল্প - এক কৃতজ্ঞ চাষী |
শিক্ষামূলক মজার গল্প - এক কৃতজ্ঞ চাষী
আল্লাহর অনুগত এক ছিল চাষী। তার ছিল জমি। এক চিলতে নয়, বেশ
খানিকটা। আর সেই জমিতে সে করতে চাষ-আবাদ।
চাষী ছিল যেমন সৎ তেমনি চরিত্রবান। সে কারোর জমির আইল ঠেলতো না। প্রতিবেশীর সাথে ঝগড়া-ঝাটি
করতো না। সব কাজে আল্লাহর হুকুম মেনে চলতো।
চাষী চাষ করতো নিজের জমি। সকাল হলেই ফজরের নামায সেরে গরুর কাঁধে লাঙ্গল দিয়ে মাঠে নামতো।
ক্ষেতে লাঙ্গল দিতো, সার
দিতো, বীজ বুনতো, সব
কিছু করতো কিন্তু ভরসা রাখতো আল্লাহর রহমতের ওপর। আল্লাহও তেমনি তার মেহনতের ফল দিতেন। তার ক্ষেতে শস্য ঢেলে দিতেন অজস্র। আশে-পাশের
সব ক্ষেতের তুলনায় তার ক্ষেতে শস্য হতো অনেক বেশী। আর সব ক্ষেত শুকিয়ে গেলেও বা কোন প্রকার দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে গেলেও তার ক্ষেত সব সময় শস্য-শ্যামল
থাকতো।
কিন্তু তার ক্ষেতে এই অজস্র ফসলের রহস্য খুব কম লোকই জানতো।
সবাই মনে করতো এ সব
বুঝি তার বেশী মেহনতের ফল। একবার ভীষণ গরম পড়লো।
রোদের তাপে ক্ষেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেলো।
পুকুরের পানি শুকিয়ে যেতে লাগলো।
গাছ পালায়, ঘরের
চালে কাকেরা কা কা চীকার করতে লাগলো।
সারাটা দুনিয়া যেন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
হায় আল্লাহ, একি
হলো! মানুষ সব সময় আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো মেঘের আশায়। মাঝে মাঝে কালো কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যেতো।
কিন্তু আবার পরক্ষণেই প্রবল বাতাস সেগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে যেতো দেশ থেকে দেশান্তরে। একটু আগেই যেখানে বিপুল আশায় মানুষের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। সেখানে আবার নিমেষেই সব আশা উবে যেতো।
মানুষের দুর্ভাবনা বেড়ে গেল। সবাই চিন্তা করতে লাগলো, এবার
কি হবে। বৃষ্টির অভাবে এবার ক্ষেতে ফসল হবেই বা কেমন করে! কিন্তু
ওই সৎ চাষীর কোন চিন্তাই ছিল না। তার মনে কোন দুঃখ বা খেদও ছিল না। লোকেরা মনে করলো, এ
বছর বৃষ্টি হচ্ছে না। কাজেই ক্ষেতে ফসল হবে না। ক্ষেতে মেহনত করেই বা কি হবে? আর
সৎ চাষীর ক্ষেতে বা ফসল হবে কেমন করে? সে
ক্ষেতে মেহনত করলেও তার সব মেহনত বিফলে যাবে। পানির অভাবে একদানাও শস্য পাবে না সে। এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো।
একদিন আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলো।
দেখতে দেখতে সারা আকাশ মেঘে ছেয়ে গেলো।
মানুষের মনে আশা জাগলো এবার বুঝি বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলো, সত্যি
বৃষ্টি হলো।
কিন্তু কোথায় যেখানে মাটি নেই, ক্ষেত
নেই, পাথর শুধু পাথর। মেঘ তার সব সম্পদ পাথরের ওপর পাহাড়ের বুকে ঢেলে দিয়ে চলে গেলো।
মানুষ আবার নিরাশায় ডুবে গেলো।
আল্লাহর মহিমা বোঝা কার সাধ্যি! যে
পাহাড়ে বৃষ্টি হচ্ছিল তার ওপর থেকে একটি নালা নীচে ক্ষেতের দিকে নেমে এসেছিল। নালাটি ওই সৎ চাষীর ক্ষেতের পাশ দিয়ে চলে গিয়েছিল। বৃষ্টি নামতে দেখে ওই ব্যক্তি নিজের ক্ষেতে পৌছে গেলো।
সে আল্লাহর শোকর গুজারী করলো।
কোদাল দিয়ে নালার মুখটি কেটে নিজের ক্ষেতের দিকে ঘুরিয়ে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ক্ষেত পানিতে ভরে গেলো।
ফলে অন্যান্য ক্ষেতে কোনো ফসল হলো না। কিন্তু তার ক্ষেতে শস্য ভরে গেলো।
তার ক্ষেতের অবস্থা দেখে, মানুষের
মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগলো।
কারোর ক্ষেতে ফসল হলো না, তার
ক্ষেতে ফসল হলো কেমন করে?
“এবার তার সব পরিশ্রম মেহনতই তো অর্থহীন ছিল?”
“তা ঠিক, তবে
তার জমির মাটি উর্বর।”
“না কখখনো না, আর
সব জমির মতো তার জমিও সমান উর্বর।”
“তাহলে কি ব্যাপার? তার
জমিতে ফসল হলো কেন?” লোকেরা
অনেক চিন্তা করলো, অনেক
বাদানুবাদ করলো কিন্তু এ ব্যাপারে
কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলো না।
অবশেষে সবাই একবাক্যে বললোঃ “চলো তার কাছ থেকেই এর কারণ জানা যাক। চলো তার কাছে চলো।”
তারা সবাই তার কাছে এলো।
তাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “ভাই, একটা
ব্যাপারের কোনো রহস্যই আমরা বুঝতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে তোমার কাছে এসেছি। তুমি নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে
অনেক কিছু জানো।
যদি তুমি অসন্তুষ্ট না হও তাহলে তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।”
“নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবে। অসন্তুষ্ট হবো কেন?”
“এই কাঠফাটা রোদ্দুরে সবার ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।----।”
“হ্যা, তা
জানি।”
“কিন্তু তোমার ক্ষেত শস্য-শ্যামল
হয়ে উঠেছে।”
“হ্যা তাতো সবাই জানে।”
“এই প্রচন্ড গ্রীষ্মে সবার ক্ষেতের মাটিগুলোই শুধু আছে। বৃষ্টি না হবার কারণে কেউ শস্যের একটি দানাও পায়নি।”
“তা অবশ্য আমি জানি।”
“কিন্ত তোমার ক্ষেতে সবুজের সমারোহ, শস্যে
সমগ্র ক্ষেত ভরে গেছে।”
“এতে কোন সন্দেহ নেই।”
“আমরা মনে করেছিলাম সবার ক্ষেতের যা অবস্থা তোমার তাই হবে। তবে যেহেতু তুমি বেশী মেহনত করো, ক্ষেতের
ও ফসলের বেশী যত্ন নাও, তাই
আগে তুমি বেশী ফসল পেতে এবং এবারও কিছুটা পাবে। কিন্তু এত বড় পার্থক্য কেমন করে হলো? কেউ
একটি দানাও পেলো না অথচ তুমি পুরো ফসল পেলে, এর
কারণ কি?”
“এটাই তো আসল কথা। অথচ এটা তোমরা বুঝতে পারো না।” সে বলতে শুরু করলো।
“তোমরা যতটুকু মেহনত করো আমিও ঠিক ততটুকুই করি। তোমাদের চাইতে বেশী মেহনত করার শক্তি আমার কোথায়? বরং
তোমাদের মধ্যে আমার চাইতে বেশী শক্তিমান লোক আছে। তারা আমার চাইতে অনেক বেশী মেহনত করে। তাদের তুলনায় আমার মেহনত কিছুই নয়।”
“তোমার কথা এক বর্ণও মিথ্যা নয়। তাহলে এর কারণ কি?” তারা
বিস্ময় প্রকাশ করলো।
“এর একটি মাত্র কারণ, আল্লাহর
রহমত আমার ওপর বিশেষভাবে বর্ষিত হয়। এই সেদিনকার কথাই ধরো।
আল্লাহ সেদিন এমনভাবে বৃষ্টি দিলেন যে,তা
পাহাড়ের ওপর দিয়ে গড়িয়ে নালার সাহায্যে আমার ক্ষেতের মধ্যে এসে পৌছলো।
যার ফলে আমার ক্ষেত শস্য-শ্যামল
হয়ে উঠলো।
অথচ অন্য ক্ষেত এক বিন্দুও পানি পেলো না। ফলে সেখানে সব শুকিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমার মেহনতের কোন বিশেষ ভূমিকা নেই।”
“হ্যা, ঠিক
কথা, তাঁর রহমত ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু তোমার ওপর আল্লাহর এই বিশেষ রহমতের কারণ কি? আমরা
সবাই তাঁর এই রহমত থেকে বঞ্চিত কেন?”
সে বলতে শুরু করলোঃ “ঠিক কথা, আল্লাহ
যেমন আমার মালিক তেমনি তোমাদেরও। কিন্তু আমার ও তোমাদের
মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। আমি তার প্রত্যেকটি হুকুম মেনে চলি। প্রতি পদে পদে তাঁর। সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি। আমার কোনো কাজের কারণে আমার আল্লাহ আমার প্রতি বিরূপ হয়ে গেলেন কিনা সব সময় আমার মনে এ ভয়
জাগরূক থাকে। যেমন ধরো আমার ক্ষেতে যে ফসল উৎপন্ন হয়, ফসল
ওঠার সাথে সাথেই আমি তার তিন ভাগের এক ভাগ আল্লাহর পথে খয়রাত করে দেই। বাকী দু’ভাগের এক ভাগ পুনরায় বীজ হিসেবে ক্ষেতে বপন করি এবং অবশিষ্ট এক ভাগ নিজের গৃহে রাখি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি
এ ব্যাপারে কখনও কোনো প্রকার লোভ করি না। আল্লাহ যা দেন তাই তাঁর নেয়ামত মনে করে গ্রহণ করি। তাতেই সন্তুষ্ট থাকি। তার ওপর সবর করি এবং আল্লাহর শোকর গুজারী করি--- কিন্তু
তোমরা ---- তার একটি হুকুমও মেনে চলো না। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটুও চেষ্টা করোনা। তার পথে এক দানা শস্যও দান করা পছন্দ করোনা। তোমরাই বলো, এ
অবস্থায় আল্লাহর দৃষ্টিতে আমার ও তোমাদের
মধ্যে কিছুটা পার্থক্য অবশ্যই হওয়া উচিত কিনা? তোমরাই
চিন্তা করো, যাদের
চোখ আছে আর যাদের চোখ নেই তারা কি সমান হতে পারে? যারা
অন্যের দান গ্রহণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, তারা
কি কখনো সমান হতে পারে? এই
পার্থক্যটাকেই আমি আল্লাহর রহমত বলে মনে করি। আমি জানিনা তোমরা একে কি মনে করবে?” একথা
বলেই সে চুপ করে গেলো।।
আল্লাহর অনুগত চাষীর কথায় সবার টনক নড়লো।
সবাই এক সাথে বলে উঠলোঃ ঠিক বলেছো ভাই। আমরা তো আসলে আল্লাহর বান্দা, তাঁর
দাস। তার মেহেরবানী--হয়
বলেই আমরা জমিতে ফসল পাই। কাজেই এ ফসলে
অন্যদের হক আদায় করতে হবে। আমাদের হতে হবে আল্লাহর অনুগত চাষী।
- - - - - - - - - - - শেষ - - - - - - - - - - - - -
২৪) তাদের সম্পদে
নির্দিষ্ট হক আছে
২৫) দান-প্রার্থী ও
বঞ্চিতদের ৷
২৬) তারা প্রতিফলের
দিনটিকে সত্য বলে মানে৷
২৭) তারা তাদের প্রভুর
আযাবকে ভয় করে৷
২৮) কারণ তাদের প্রভুর আযাব এমন বস্তু নয় যে সম্পর্কে নির্ভয় থাকা যায়
(সুরা আল মায়ারিজ – ২৪ -২৮)
No comments:
Post a Comment