![]() |
শিক্ষামূলক ও মজার ঘটনা - আল্লাহর এক কৃতজ্ঞ বান্দা |
শিক্ষামূলক ও মজার ঘটনা - আল্লাহর এক কৃতজ্ঞ বান্দা
সে
অনেক অনেক দিন আগের কথা। কতদিন তা ঠিকমত হিসেব কষে বলা সহজ নয়। তবে কয়েক হাজার বছর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন দুনিয়ায় এত লোকবসতি ছিল না। পৃথিবীর নানা জায়গায় মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করতো।
সে সময় বনি ইসরাঈলের মধ্যে তিনজন লোকের দুঃখের কোন সীমা ছিল না। তারা অতি কষ্টে দিন কাটাতো।
নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য তারা সব সময় দুঃখ করতো আর কাঁদতো।
তাদের একজন ছিল কুষ্ঠরোগী। তার সারা শরীর ছিল ঘায়ে ভরা। তার দু'হাতের
আঙ্গুল, পায়ের আঙ্গুল, নাক
ও কান পচে খসে খসে পড়ছিল। সেগুলো থেকে উকট দুর্গন্ধ বের হতো।
শত শত মাছি সব সময় তার পচা ঘাগুলোর ওপর ভন ভন করতো।
মানুষ তাকে দেখে দূরে সরে যেতো।
তাকে ঘৃণা করতো।
আর একজনের ছিল মাথাজোড়া টাক। তার মাথার কোথাও একগাছি চুল ছিল না। লোকেরা তাকে সব ভাল কাজের পথে বাধা মনে করতো।
সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠে প্রথমে তার মুখ দেখা পছন্দ করতো না। সবাই তার সংসর্গ থেকে দূরে সরে থাকতে চাইতো।
তৃতীয় জন ছিল অন্ধ। আল্লাহ তার দু চোখের সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন। দুনিয়ার বুকে সে চলে ফিরে বেড়াতো কিন্তু দুনিয়ার কিছুই দেখতে পেত না। সবাই তার প্রতি সহানুভূতি দেখাতো।
সে ছিল সবার করুণার পাত্র। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করার জন্যে তাঁর এক ফেরেশতাকে পাঠালেন। আল্লাহর ফেরেশতা গেলেন কুষ্ঠরোগীর বাড়ি। দেখলেন তার মুখটা বড়ই মলিন। সে বসে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।
“তুমি কাঁদছো কেন বাপু।” ফেরেশতা সহানুভূতির স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “আল্লাহর
এই বিশাল পৃথিবীতে তোমার কিসের দুঃখ?”
“নিজের দুর্ভাগ্যের কথা মনে করে আমার কাঁদা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কি?” কুষ্ঠরোগী
মলিন মুখে জবাব দিল।
“আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।” ফেরেশতা আবার বললেন।
“কি কথা?”
“তুমি কি চাও?”
“এই কুষ্ঠরোগের হাত থেকে মুক্তি ছাড়া আমি আর কি চাইতে পারি?”
“তাহলে তুমি চাও সুন্দর-সুস্থ
সবল শরীর, তাই
না?”
“হ্যা, এ ছাড়া
আমার আর কি চাইবার আছে? এই
রোগের জ্বালায় আমি শেষ হয়ে গেলাম। মানুষ আমাকে ঘৃণা করে, তাদের
কাছে আমাকে বসতে দেয় না। আমাকে দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।”
“তাহলে আল্লাহর কাছে আমি তোমার জন্য দোয়া করছি।”
এই
বলে ফেরেশতা তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন। দেখতে দেখতে কুষ্ঠরোগী সেরে উঠলো।
তার গায়ের রং পালটে গেল। তার কুৎসিত কদাকার দেহে নতুন লাবণ্য ফুটে উঠলো।
কুৎসিত মানুষটির মধ্য থেকে একটি সুশ্রী, সুস্থ, সবল যুবক বের হয়ে এলো।
ফেরেশতা
জিজ্ঞেস করলেনঃ “এবার বলো তুমি কোন সম্পদ বেশী ভালবাস?”
“উট” লোভাতুরের ন্যায় ফেরেশতার দিকে তাকিয়ে সে ঝটপট জবাব দিল।
“এই গর্ভবতী উটটি ধরো।
আল্লাহ তোমাকে এর মধ্যেই বরকত দেবেন।” একথা বলেই ফেরেশতা গায়েব হয়ে গেলেন।
সেখান
থেকে ফেরেশতা এলেন টাক মাথার লোকটির কাছে। সে তখন একাকী বসে নিজের দুর্ভাগ্যের জন্যে হা-হুতাশ
করছিল। অপরিচিত লোককে দেখে খেঁকিয়ে উঠলো, “মরার আর জায়গা পেলেনা? আমাকে
জ্বালাতে এলে কেন?”
“একটা কথা জানতে এসেছিলাম।” ফেরেশতা সহানুভূতিমাখা কণ্ঠে বললেন।
“আমার কাছে জানবার মত এমন কি কথা আছে?”
“আমাকে তোমার একজন বন্ধু মনে করো।” ফেরেশতা বললেন। “আমি তোমার উপকার করতে চাই। আমি জানতে চাই তুমি কি চাও? কি
পেলে তুমি খুশী হও?”
“আমি ---- আমি কি --- চাই, এ্যা--? মাথাভর্তি
কালো চুল ছাড়া আর কি চাইব বল?”
“ও, তাহলে তুমি মাথা ভর্তি চুল পেলেই খুশী?”
সে
খুশীতে ডগমগ। “সত্যিই কি এটা সম্ভব? মাথায়
চুল ভরে গেলে লোকেরা আর আমাকে বিদ্রুপ করবে না। তখন
কতই না মজা হবে। সবাই আমাকে ভালবাসবে- সম্মান
করবে। আমি বুক ফুলিয়ে পথ দিয়ে হাঁটতে পারবো।
কিন্তু --- কিন্তু, এটা
কি সম্ভব?”
“হ্যা, আল্লাহর কাছে তোমার জন্য দোয়া করছি।” এই বলে ফেরেশতা তার টাক মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মুহুর্তের মধ্যে তার সারা মাথা কালো কুচকুচে চুলে ভরে গেল। তার চেহারায়ও লাবণ্য ফুটে উঠলো।
ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেনঃ “বলল, তুমি
কোন সম্পদ বেশী ভালবাস?”
“গরু, আমি গরু বেশী ভালবাসি” সে সোৎসাহে জবাব দিল।
“তাহলে এই গর্ভবতী গাভীটি রাখো।
আল্লাহ তোমাকে এ থেকেই
বরকত দেবেন।” একথা বলে ফেরেশতা চলে গেলেন। এবার ফেরেশতা এলেন অন্ধের কাছে।
অন্ধের
কাছে সারা দুনিয়াটাই অন্ধকার। সে আল্লাহর এই বিশাল দুনিয়ার কিছুই দেখতে পায় না। তাই নিজের দুঃখের কথা চিন্তা করে বসে বসে চোখের পানি ফেলছিল। ফেরেশতার সাড়া পেয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ “কে ভাই তুমি? অন্ধের
কুঁড়েঘরে এলে কি উদ্দেশ্যে?”
“তোমার কাছে সবাই অপরিচিত আর আমিতো অনেক অনেক বেশী অপরিচিত।” ফেরেশতা বললেন, “তবে তুমি জেনে রাখ তোমার এক বন্ধু হিসেবে তোমার কিছু উপকার করার জন্যে আমি তোমার কাছে এসেছি।”
“তোমাকে
একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।” ফেরেশতা আবার বললেন।
“কি কথা, আমার
মতো এক নগন্য অন্ধের কাছ থেকে আবার কি কথা জানতে চাও?”
“দুনিয়ার
কোন জিনিসটি তুমি সবচাইতে বেশী ভালবাস?”
“আমার মতো অন্ধ দুটি চোখ ছাড়া আর কি ভালবাসতে পারে?”
“যদি তোমার দুটি চোখ ফিরিয়ে দেয়া হয়--।” ফেরেশতা তার মলিন মুখের দিকে চেয়ে বললেন।
“আহা, তাহলে কতই না ভালো হয়। আল্লাহর এই বিচিত্র দুনিয়ার কত কিছুই আমি দেখতে পাবো? তাহলে
আমি আল্লাহর কাছে অসংখ্য শোকরগুজারী করবো।”
“মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমি তোমার চোখের জন্যে দোয়া করছি।” এই বলে ফেরেশতা তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। তার চোখের জ্যোতি ফিরে এলো।
“ইয়া আল্লাহ! ইয়া
আল্লাহ! তোমার কি অপার মহিমা! তোমার
দয়ার শেষ নেই। তোমার রহমতের অন্ত নেই! আহা! আমি কি দেখছি! আমি
সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। আহা! কি
সুন্দর এই পৃথিবী! গাছ-পালা, আকাশ, মানুষ! আহা
সব-সব সুন্দর! আল্লাহ! তুমি কতইনা সুন্দর! কতই
না ভালো!!”
“আমি আর একটা কথা জানতে চাই” ফেরেশতা আবার বললেন।
“কি কথা?” কৃতজ্ঞতার
দৃষ্টিতে ফেরেশতার দিকে চেয়ে সে জিজ্ঞেস করলো।
“দুনিয়ার
কোন সম্পদ তুমি বেশী ভালবাস?”
“ছাগল আমি সবচেয়ে বেশী ভালবাসি।” সে জবাব দিল।
“এই তোমাকে একটি গর্ভবতী ছাগী দিলাম। আল্লাহ এর মধ্যে তোমাকে বিপুল বরকত দান করবেন।” “আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।” ফেরেশতা চলে গেলেন। কুষ্ঠরোগী, টাকমাথা
ও অন্ধ- তিনজনের
মনের আনন্দে দিন কাটতে লাগলো।
তারা পশুপালনে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে উঠলো।
তাদের প্রতি যত্ন নিতে লাগলো।
দিনভর পশুদের চারণ ক্ষেত্রে নিয়ে ফিরতো এবং সঁঝের বেলা পেট ভরিয়ে পানি পান করিয়ে নিয়ে ঘরে ফিরে আসতো।
এভাবে ধীরে ধীরে কয়েক বছর গড়িয়ে গেলো।
উটের সংখ্যা বেড়ে গেল। গরুর সংখ্যা বেড়ে গেলো।
ছাগলের সংখ্যা বেড়ে গেলো।
তাদের তিনজনের অভাব ঘুচলো।
এখন তাদের খাদ্য-পানীয়, অর্থ, সম্পদ-কোন কিছুর অভাব থাকলো না। তাদের ধনের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।
মানুষের চোখে তাদের মান সম্মান-ইজ্জত
বেড়ে গেলো।
কিন্তু তাদের পরীক্ষার এখনো বাকি ছিল। ফেরেশতা আবার এলেন কুষ্ঠরোগীর বাড়িতে। তবে এবার তিনি এলেন দরিদ্রের বেশ ধরে।।
কুষ্ঠরোগী এখন তো আর রোগী নয়। সে এখন একজন সুন্দর সুশ্রী-সুঠামদেহী
যুবক। ধনী যুবক। বহু টাকার মালিক। সে উটের দেখাশুনায় ব্যস্ত ছিল। ফেরেশতা তার সামনে হাজির হলেন।
“তুমি কে হে বাপু? এখানে
কি দরকার?” কুষ্ঠরোগী
ঝাঁঝালো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
“আমি বড়ই গরীব বাবা। আমি সফর করছিলাম। কিন্তু পথে আমার টাকা-পয়সা
সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার কাছে একটি কানাকড়িও নেই। কিভাবে দেশে ফিরবো সেই চিন্তায় আমি আকুল। আল্লাহ ছাড়া আমার আর কোন সহায় নেই।”
“তোমার এ দুরবস্থার
জন্যে আমি দায়ী নই। কাজেই এ ব্যাপারে
আমি কি করতে পারি?” কুষ্ঠরোগী
মুখ বিকৃত করে বললো।
“আমি তোমার কাছে সাহায্য চাইছি। সেই আল্লাহর নামে সাহায্য চাইছি যিনি তোমার দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগ সারিয়ে দিয়েছেন। তোমাকে সুন্দর, সবল
ও সুস্থ শরীর দান করেছেন। তোমাকে এই অসংখ্য উট ও বিপুল
ধন-সম্পদ দিয়েছেন। আল্লাহর নামে আমাকে একটি উট দাও। এই উটে চড়ে আমি নিজের দেশে যাবো।
আল্লাহ তোমাকে এর বদলায় আরো অনেক দিয়ে দেবেন।”
“দূর হ, “দূর হ, “দূর হ, এখান
থেকে! তোর মতো অনেক ভিখারী দেখেছি! ভিখারী
সাহেব আবার উটে চড়ে দেশে যাবে। ভড়ং দেখাবার জায়গা পায়নি আর। যা যা। দূর হয়ে যা, এখান
থেকে দূর হয়ে যা! আমার
এখন অনেক কাজ বাকি। অনেকের হক আদায় করতে হবে। তোর মতো ভিনদেশী ভিখারীকে দেবার মত আমার কাছে কিছুই নেই।” কুষ্ঠরোগী রাগে ফেটে পড়লো।
“আমার মনে পড়ছে” ফেরেশতা বলতে লাগলেন, “আগে তুমি কুষ্ঠরোগী ছিলে। মানুষ তোমাকে ঘৃণা করতো।
কেউ তোমাকে কাছে বসতে দিতো না। তুমি ছিলে অত্যন্ত গরীব। পরের কাছে চেয়ে-চিন্তে
যা পেতে তাতেই তোমার দিন গুজরান হতো।
তোমার কোনো সম্মান ছিল না। কেউ তোমাকে ভালবাসতো না। তারপর আল্লাহ তোমার রোগ সারিয়ে দিলেন। তোমাকে ধন-সম্পদ
দান করলেন। আর এই পরম করুণাময় আল্লাহর পথে তুমি একটি উটও দান করতে পারছো না?”
“বেশ বাজে বকতে পারোতো তুমি,” কুষ্ঠরোগী
রাগে দিশেহারা হয়ে পড়লো, “আমার এ ধন
সম্পত্তি আমার বাপ-দাদার
আমল থেকে চলে আসছে।”
“ভালো কথা, তাই
যদি হয়ে থাকে, তাহলে
মনে রেখো, তুমি
মিথ্যেবাদী হলে আল্লাহ তোমাকে তোমার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন।” এই কথা বলে ফেরেশতা সেখান থেকে টাকমাথার কাছে চলে এলেন। টাকমাথা তখন গরু দেখাশুনায় ভীষণ ব্যস্ত। তার কারো দিকে ফিরে তাকাবার ফুরসত নেই।
“ওহে আল্লাহর বান্দা! আমার
একটি কথাতো শোনো” ফেরেশতা চীৎকার করে বললেন।
“তোমরা আজকাল বড় জ্বালাতন করছো, কি
বলতে চাও শিগগির বলে ফেললা, আমার
সময় কম।” টাকমাথা বিরক্তিমাখা স্বরে বললো।
“আমি বড় গরীব। সফরে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার হাতে একটি পয়সাও নেই। কেমন করে দেশে ফিরবো ভেবে পাইনে। আল্লাহ ছাড়া আমার আর কোন সম্বল নেই।”
“আমি কি করতে পারি? তোমার
এ অবস্থার জন্যে আমি দায়ী নই।” টাকমাথা মুখ ফিরিয়ে নিল। “আল্লাহর নামে একটা গরু আমাকে দাও। আল্লাহ তোমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন। তোমার মাথায় সুন্দর কালো কালো চুল দিয়েছেন। তোমাকে ধন দৌলত দিয়েছেন, অসংখ্য
গরু দিয়েছেন। সমাজে মান-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি
সবই দিয়েছেন।”
“যা যা, তোর
মতো অনেক ভিখারী আমার দেখা আছে। আমার দান করার দরকার নেই। এগুলো আমার অনেক মেহনতের ধন। ভাগ ভাগ, তোকে
দেবার মত আমার কিছুই নেই।” টাকমাথার কণ্ঠে ক্রোধ ঝরে পড়ছিল।
“আমি জানি তোমার মাথাজোড়া টাক ছিল। লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করতো।
তুমি ছিলে বড়ই গরীব। আল্লাহ তোমার ওপর মেহেরবাণী করলেন। তোমার মাথায় কালো কুচকুচে চুল দিলেন। তোমাকে অসংখ্য গরু ও বিপুল
ধন-সম্পত্তি দিলেন। সমাজে তোমার মান-সম্মান
ও প্রতিপত্তি দিলেন। এত বড় করুণাময় আল্লাহর পথে তুমি একটি গরুও দান করতে পারছো না!”
“কি কথা বলো তুমি ভিনদেশী ভিখারী? আমি
জানি, ভালো করেই জানি, এই
বিপুল সংখ্যক গরু, টাকা-পয়সা সব আমার বাপ-দাদার
নিকট থেকেই আমি পেয়েছি।”
“ভালো কথা, তোমার
কথা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আল্লাহ তোমাকে তোমার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন। এই কথা বলে ফেরেশতা সেখান থেকে অন্ধের বাড়ির দিকে চললেন।
অন্ধ
তখন তার ছাগলের পাল নিয়ে ব্যস্ত। “একটা কথা শুনে যাও ভাই।” ফেরেশতা অন্ধকে ডেকে বললেন।
“কি কথা বল ভাই।”
“আমি একজন গরীব মুসাফির। আমার সফরের শেষ সম্বলটুকুও ফুরিয়ে গেছে। এখন আল্লাহ ছাড়া আমার কোন সহায় নেই। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটা ছাগল দাও। সেটা বিক্রি করে আমি কিছু অর্থ সগ্রহ করবো এবং তার সাহায্যে আমার সফরের কাজ শেষ করবো।”
“আল্লাহ
আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন। আমাকে এই বিপুল সম্পদ দান করেছেন। এর মধ্যে তোমারও হক আছে। আমার ভাই, আমি
আনন্দের সাথে বলছি, তুমি নিজের ইচ্ছেমতো ছাগল নিয়ে যাও, একটা
কেন, দুটো তিনটে, চারটে, যে ক’টা তোমার প্রয়োজন নিয়ে যাও। বরং আমার ভাই, এসবগুলোই
তুমি নিয়ে যাও।” অন্ধ আবেগ ভরে বলে যাচ্ছিলঃ “আমার ভাই! আল্লাহ
আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন। আমি অন্ধ ছিলাম আমাকে চোখ দিয়েছেন। আমি গরীব ছিলাম- আমাকে
এই বিপুল সংখ্যক ছাগল দিয়েছেন। আমি তুচ্ছ ও নগণ্য
ছিলাম, আমাকে সমাজে সম্মান ও প্রতিপত্তি
দান করেছেন। এই বিপুল নেয়ামত-এ
সব তারই দান। তাঁর নামে ও তাঁর
পথে এসব দান করলে তিনি আবার এর চাইতে বেশী সম্পদ আমাকে দান করবেন। আমার ভাই! যে
কটা ছাগল তোমার প্রয়োজন এখান থেকে নিয়ে যাও।”
এভাবে
আল্লাহর দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ফেরেশতা বড়ই আনন্দিত হলেন। “তোমার ছাগল তোমার থাক। আমার আর প্রয়োজন নেই, ফেরেশতা
বলতে লাগলেন, আল্লাহ
তোমার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেবেন। তুমি আল্লাহর শোকর আদায় কর কিনা আমি শুধু এতটুকুই দেখতে এসেছিলাম। তোমার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি আল্লাহর নেয়ামতের আরো শোকর করতে থাক। আল্লাহ তোমার প্রতি তাঁর করুণা অজস্র ধারায় বর্ষণ করবেন। তোমার অন্য দুই বন্ধু, টাকমাথা
ও কুষ্ঠরোগী ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর নেয়ামতের কদর করেনি। তারা শোকর আদায় করেনি। তাই তারা নিজেদের আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। আমার ভাই! আল্লাহ
তোমাকে তাঁর করুনার ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন। এবার তাহলে চলি। ফেরেশতা চলে গেলেন।
বুখারী
ও মুসলিম শরীফের হাদীসের ভিত্তিতে ঘটনাটি গল্পাকারে রচিত।
No comments:
Post a Comment