![]() |
দস্তরখানা - ছোট গল্প - হাসির গল্প - রম্য গল্প - মজার গল্প |
দস্তরখানা
- ছোট গল্প - হাসির গল্প - রম্য গল্প - মজার গল্প
গ্রামের
এক বিয়ের উৎসব। বরযাত্রীরা এসে গেছে। ছোট ছেলেমেয়ে ও শিশুদের হৈ-চৈ উল্লাস-উচ্ছ্বাস। মহিলাদের ‘গোলপিল’, ‘ঔৎসুক্য-উঁকিঝুঁকি,’ ভারি
একটা আনন্দের মুহূর্ত। কিছুক্ষণের মধ্যেই বদনা, চিলুমচি এনে
রাখা হলো বরযাত্রীদের হাত মুখ ধোবার জন্য। তারপর নাড়ার-খড়ের
ওপরে পাটি বিছিয়ে খাবার বন্দোবস্ত করা হলো।
কন্যা
পক্ষের কে একজন যেন বার কয়েক বললেন : প্রথমেই দস্তরখানা নিয়ে আস।
কিন্তু দস্তরখানা এলো না। আবার আনতে বললেন তিনি ‘দস্তরখানা’ কিন্তু
তবু এলো না। ইতোমধ্যে খাওয়া শুরু হয়ে গেছে। ভাত, শোল মাছের
দোপেঁয়াজা, গরুর মাংস, আর টাকি মাছ দিয়ে
রান্না করা লাউ আর শেষে দই আর খেজুরের রসের ঝোলা গুড়।
খাওয়া-দাওয়া
ভালই হল, কিন্তু ফ্যাকড়া বেধে গেল ওই যে প্রথমে উচ্চারিত হয়েছিল
সেই দস্তরখানা নিয়ে। মেয়ের বাবা পান-সুপারির ডালা হবু বিয়াইয়ের
সামনে ধরে বললেন : ভাইসাব, পান খান। খাওয়া-দাওয়া পছন্দ হলে মন্দছন্দ কইয়েন না।
বরের
পিতা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, খাওন খারাপ হয় নাই—তয় দস্তরখানা
দিলেন না যে! কনের পিতা শরমিন্দা হয়ে বললেন, ভাইসাব
বেশি ছিল না বলে দেই নাই। সকলের হইতো না।
বরের
পিতা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললঃ কম দেইখ্যা নিজেরা খাইলেন, আর
আমাগো খালি নাম শুনাইলেন? কনের পিতার মুখ ফস্কে বেরিয়ে যায়;
‘জোলা নাকি’-দস্তরখানা কি খাইবার জিনিস?
আপনেরা শালায় ভদ্রলোকই না! এই বিয়া দেওয়ন
আমাগো ভুল অইছে।
তখন
হৈ-চৈ চিকার দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ অবস্থায় এক মুরব্বি
এসে দু'পক্ষকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। আর হাসতে হাসতে বলেন : দস্তরখানা
নিয়া এত হুজ্জতির কাম কি! ওইটা ছিলো পুরানা আমলের জিনিস—মাইনসে খাইয়া
কাটাকুটা,
হাড়জুঠা তাতে ফেলতো। অহন হের চল
নাই, মাইনসে জানবো কেমনে যে তা খাওনের জিনিস না, কিন্তুক তার
নাম ‘দস্তরখানা’। বসেন মিয়ারা, বিয়া সারেন। বিয়াতে লাখ কথা
হয়, তাইলে সে বিয়া। তাইতেইতো মাইনসে কয়, বিয়ার নাম নাগর আলী। বিয়ার নাম সাগর আলী। বিয়া অইল হাজার পেঁচালী”।
বুড়োর
কথায় পরিবেশ শান্ত হয়।
No comments:
Post a Comment