![]() |
সত্য ঘটনা - আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন – আব্দুল মান্নান তালিব |
হঠাৎ
মরিয়মের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এত রাতে কিসের আওয়াজ! চারদিক
নিরব বিস্তব্ধ। শুধু একটানা ঝি ঝি পোকার ডাক। আবার সেই আওয়াজ। আওয়াজটা অবশ্য খুব আস্তে ধীরে। তবুও তার বুঝতে মোটেই কষ্ট হয় না কোন কিছুর ওপর লোহা দিয়ে পিটানো হচ্ছে। কিন্তু এত রাতে কে পিটাচ্ছে? কি
পিটাচ্ছে? মরিয়মের কৌতুহল ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আওয়াজটা মনে হয় পাশের কোন কামরা থেকে আসছে। সে ওঠে। পাশে শুয়ে আছে তার নতুন ভাইটি। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যেন কোন অচীন দেশের রাজ কুমার। মাত্র তিন মাস হলো তার এই নতুন ভাইটি তাদের ছোট্ট ঘরখানা আলো করেছে। কচি মুখখানি নিবিড় মমতায় ভরা। কিন্তু ভাইয়ের চিন্তা রেখে সে এখন নিশুতি রাতের আওয়াজের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। পাশের ঘরের দরজা খুলতেই দেখে তার আম্মিজান একটি কাঠের বাক্স তৈরী করছেন।
“আম্মি।
এত রাতে..."
“চুপ” আম্মি ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দেন, “আস্তে কথা বলো।”
“আম্মিজান! এই দুপুর রাতে বসে বসে আপনি এ কি
বানাচ্ছেন।”
আম্মি
বাক্স তৈরীতে মশগুল ছিলেন। আরেকটা পেরেকের মাথায় আস্তে করে কয়েক ঘা বসিয়ে দিয়ে মেয়ের কানে কানে বলেন, “ভাইয়া
ঘুমুচ্ছে না? তার
ঘুম ভেঙ্গে যাবে।”
“হা ঘুমুচ্ছে তো।”
“যাও তাকে নিয়ে এসো।
যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায়।”
“কেন আম্মি? সে
তো খুব আরামে ঘুমুচ্ছে।”
“যাও, ভালো মেয়ের মতো যা বলি শোননা। হ্যাঁ, তবে
সাবধান, যেন ঘুম ভেঙ্গে না যায়।” আম্মি আবার চুপি চুপি বলেন। মেয়ে মায়ের আদেশ পালন করে। সে গিয়ে কচি একরত্তি ভাইটিকে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠায়। ক্ষুদে রাজকুমারটি তখনো গভীর ঘুমে অচেতুন। সে তাকে মায়ের কাছে আনে। মায়ের হাতে তুলে দেয়। মা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। নরোম তুলতুলে গালটায় আলতোভাবে একটা চুমো খান। তারপর বাক্সের ঢাকনাটা খুলে তার মধ্যে ছেলেকে শুইয়ে দেন। এবার ঢাকনাটা বন্ধ করতে থাকেন।
“হায়, হায়, আম্মি! এ আপনি
কি করেন? ভাইয়া
যে দম আটকে মারা যাবে।” বলতে বলতে ভীত-বিহবল
মেয়ে মায়ের হাত টেনে ধরে।
“চুপ করো, চিৎকার
করোনা। সবর কর মরিয়ম। এটাই আল্লাহর হুকুম।” একথা বলতে বলতে মা বাক্সের ঢাকনাটা বন্ধ করে দেন। মরিয়ম অবাক হয়ে এ দৃশ্য
দেখতে থাকে। তার মা মোম দিয়ে বাক্সের চারদিক বন্ধ করে দেন। ঢাকনায় কয়েকটা ছোট ছোট ফুটো ছিল। মরিয়ম ভাবতে থাকে বোধ হয় বাতাস যাওয়া-আসা
করার জন্য এই ফুটোগুলো রাখা হয়েছে। তাহলে তার ভাইয়া মারা যাবে না। এর মধ্যে ঘুমিয়ে থাকবে। মরিয়ম বুঝতে পারে না তার আম্মি কি চান। ভাইয়াকে বাক্সে ভরে কি করবেন? পরক্ষণে
মনে পড়ে, আম্মি
বলেছেন, এটাই আল্লাহর হুকুম। মরিয়ম এতক্ষণ চিন্তায় ডুবে ছিল। হঠাৎ দেখে তার আম্মি বাক্সটি কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ধীর পদক্ষেপে দরজার দিকে চলেছেন। মরিয়ম মার পেছনে পেছনে চলতে থাকে। আহা! কি
আনন্দেই না সে ছোট্ট ফুটফুটে ভাইটিকে নিয়ে খেলা করছিল। কিন্তু আর সে ভাইয়ার সাথে খেলতে পারবে না। আজ না জানি আম্মি ভাইটিকে বক্সে ভরে নিয়ে কোথায় চলেছেন। কিছু জিজ্ঞেস করলে ভালো করে বলেও না। মরিয়মের মন বিষিয়ে ওঠে। তার মনে ইচ্ছা জাগে, সে
মায়ের কাছ থেকে বাক্সটা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাবে বনের মধ্যে। একদম গভীর বনের মধ্যে। সেখানে কোন মানুষের হিংস্র দৃষ্টি পৌছুতে পারবে না কোন দিন। শুধু সে আর তার কচি ভাইটি মনের সুখে খেলা করবে সেখানে। ছোট্ট ভাইটিকে সে শুধু আদর করবে। গাছ থেকে ফল পেড়ে এনে নিজে খাবে আর কচি ভাইটিকে খাওয়াবে মিষ্টি মধুর ফলের রস। কেউ তার ভাইয়াকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। সে এগিয়ে গিয়ে মায়ের কাপড় টেনে ধরে। “আম্মি! আমার
আম্মি!......"
“চুপ, মরিয়ম, চুপ
করো? .........”
“হায়! হায়! আম্মি
আপনি ভাইয়াকে ........."
“চুপ করো, একদম
চুপি চুপি বেরিয়ে যেতে হবে এই পাড়া থেকে, তারপর
যেখানে লোকজন নেই.......”
“এই দুপুর রাতে যেখানে লোকজন নেই? ......”
“হাঁ, হাঁ, চুপ
করো, নিরবে হেঁটে চলো।
নাহলে তোমার ভাইয়ার ক্ষতি হবে।”
মরিয়ম
এবার একদম চুপ হয়ে যায়। লোকালয়ের বাইরে আসতেই সে আর একদণ্ড চুপ থাকতে পারে না। জিজ্ঞেস করে, “আম্মি আমার আম্মি। এবার বলেন ভাইয়াকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
“তোমার ভাইয়াকে নীল নদে ভাসিয়ে দেবো।”
“হায়, হায়, আম্মি! আপনি এ কি
কথা বললেন? তাহলে
ভাইয়া বাঁচবে কেমন করে? কে
তাকে দুধ খাওয়াবে? আমার
ভাইয়া যে কেঁদে কেঁদে মারা যাবে। আর নীলের কিনারায় যেসব জন্তু জানোয়ার আছে তারা তাকে খেয়ে ফেলবে। হায়, আমার
আম্মি! আপনি কেন এমন কাজ করতে যাচ্ছেন? আপনার
দিলে কি একটুও দয়ামায়া নেই? আপনার
কলিজার টুকরোকে আপনি এভাবে জন্তু-জানোয়ারের
মুখে ছেড়ে দিচ্ছেন? আম্মি! আপনি না পারেন ভাইয়াকে আমার হাতে দিয়ে দিন। আমি তাকে নিয়ে গভীর বনে চলে যাবো।
সেখানে কেউ আমাদের নাগাল পাবে না। বাদশাহ ফেরাউনের গুপ্তচরেরা হাজার চেষ্টা করেও আমাদের সন্ধান পাবে না।” মরিয়ম মায়ের পথ আগলে দাঁড়ায়। বাক্সের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
“না, মরিয়ম না, আমার
পথে বাধা দিয়ো না। সবর করো।
এটাই আল্লাহর হুকুম। নিশ্চিন্ত থাকো, আল্লাহ
তোমার ভাইয়াকে রক্ষা করবেন।”
“এটাই আল্লাহর হুকুম? সত্যি, এটাই আল্লাহর হুকুম?”
“হাঁ, মরিয়ম......”
“আহ! আল্লা-হ..! তুমি আমার ভাইয়াকে রক্ষা করো।” মরিয়ম চোখের পানি মুছতে থাকে। মায়ের পেছনে পেছনে নিরবে চলতে থাকে সে। এখন তারা নীলের কিনারে পৌঁছে গিয়েছে। বর্ষার নীল পানিতে টইটুম্বুর। ছলাৎ ছলাৎ করে বড় ঢেউগুলো এসে কিনারায় আছড়ে পড়ছে। পানির স্রোতও প্রবল। মা এতক্ষণে কাঁধ থেকে কাঠের বাক্সটি নামান। নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে বাক্সটি ভাসাতে যাবেন এমন সময় মেয়ে মায়ের হাত টেনে ধরে। “আম্মি পানির তোড় দেখছেন না? বাক্সটি
এখনি তলিয়ে যাবে।”
“তা
ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এটাই আল্লাহর হুকুম।” মা বাক্সটি পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে বড়ই নিশ্চিন্তে একটা শ্বাস ফেলেন। বলতে থাকেনঃ “হে আল্লাহ! আমি
তোমার হুকুম পালন করেছি। তোমার হুকুম এক চুলও অমান্য করিনি। হে আল্লাহ! হে
রব্বুল আলামীন! আমার
সব ভুল-ত্রুটি
সব গুনাহ মাফ করে দিয়ো।
হে পরওয়ারদিগার! তোমার আমানত তোমারই হাওয়ালা করে দিয়েছি।”
মেয়েকে
বলেনঃ “যাও নীলের কিনারে দেখতে দেখতে যাও। দেখো আল্লাহ তার বান্দাকে কিভাবে রক্ষা করেন।” একথা বলে মা ঘরের পথ ধরেন। মরিয়ম তার ভাইয়ার বাক্সটির ওপর নজর রেখে নীলের কিনারা ধরে হাঁটতে থাকে। কোন বড় ঢেউ এসে যখন বাক্সের গায়ে আছড়ে পড়ে এবং বাক্সটি ঢেউয়ের মাথায় একটি মোচার ভোলার মতো ওঠানামা করতে থাকে তখন ভয়ে মরিয়মের মুখ থেকে বের হয়ে পড়েঃ “হে আল্লাহ! এবার
বুঝি সব শেষ।” সে বাক্সটি নজরে রেখে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলতে থাকে আর চলতে থাকে। কখনো ঢেউয়ের ধাক্কায় বাক্সটি একেবারে নদীর কিনারে চলে আসে। তার মন চায় বাক্সটি তুলে নিয়ে একেবারে বনের গভীরে চলে যায়। কিন্তু আবার মায়ের সেই কথাই মনে পড়ে, “এটাই আল্লাহর হুকুম। দেখো, আল্লাহ
তাঁর বান্দাকে কিভাবে রক্ষা করেন।” সে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে পূর্ব দিক ফর্সা হয়ে আসে। ধীরে ধীরে সূর্য উঠে দুনিয়ার সব আঁধার দূর করে দেয়। এমন সময় হঠাৎ সামনে পড়ে একটি বিরাট প্রাসাদ। অনেকখানি জায়গা জুড়ে একেবারে নদীর কিনারা ঘেঁষে এর অবস্থান। নদীর কিনার ধরে সামনে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সে ভাবে, এবার
কি হবে? বাক্সের
অনুসরণ করাতো আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রাসাদ ঘুরে নদীর কিনারে আসতে আসতে বাক্স অনেক দূর চলে যাবে। এখন কি করা যায়। সে এসব সাত-পাঁচ
ভাবছিল এমন সময় দেখে নদীর দিকে প্রাসাদের একটি দরজা খুলে গেছে। মূল্যবান পোশাকে সজ্জিতা অনেকগুলো মেয়ে ঘাটে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে একজন যে সবচাইতে মূল্যবান পোশাকে সজ্জিতা এবং যাকে সবচেয়ে সম্মানিতা ও প্রাসাদের
কত্রী বলে মনে হয়, তিনি
হাত বাড়িয়ে নদীতে বাক্সটির দিকে দেখান। তিনি পাশে দাঁড়ানো একজনকে কি যেন বলেন। তারপর সে দেখে জাল নিয়ে একদল জেলের আবির্ভাব। মুহূর্তের মধ্যে তারা বাক্সটি জালে আটকে ফেলে প্রসাদের দিকে নিয়ে চলে। মরিয়ম দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সেও জেলেদের পেছনে পেছনে চলে। জেলেদের সাথে সাথে সে প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করে। জেলেরা বাক্সটিকে সেই সুসজ্জিতা ও সম্মানিতা
মহিলার হাতে সোপর্দ করে নিজেদের পারিশ্রমিক ও পুরস্কার
নিয়ে চলে যায়। মরিয়ম দাঁড়িয়ে থাকে। সে দেখতে পায় সম্মানিতা মহিলা বাক্সটির ডালা উঠিয়ে ফেলেছেন। বাক্স খুলতেই মহিলার চোখে মুখে বিস্ময় দেখা দেয়। তার মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, “শিশু”। মরিয়মের
বুক দুরু দুরু করতে থাকে। সে প্রাসাদ কত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে থাকে। তার পা কাপতে থাকে। মনে হয় ভাইয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে এখনই সে এক ছুটে প্রাসাদের বাইরে চলে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই তার কানে আওয়াজ ভেসে আসেঃ “দেখো, আল্লাহ
তার বান্দাকে কিভাবে রক্ষা করেন। সে নিজের বুকে হাত চেপে ধরে।
প্রাসাদ
কত্রী বাক্স থেকে শিশুটি বেরে করেন। দু’হাতের ওপর রেখে তাকে উঁচু করে ধরেন। নিজের ভাইয়াকে জীবিত অবস্থায় আঙ্গুল চুষতে দেখে মরিয়মের আনন্দের সীমা থাকে না। সে চুপচাপ দেখতে থাকে। প্রাসাদ কত্রী ফুটফুটে শিশুটিকে নিজের মুখের কাছে তুলে আনেন। অসীম মমতায়, মাতৃত্বের
গভীর আবেগে আপনা আপনি তার মুখ নেমে যায় শিশুর ঠোটের ওপর। তাকে চুমো খান। আদর করেন। তার পাশে দাঁড়ানো দাসীদের হুকুম দেনঃ “এখনি চলে যাও, নগরের
সবচেয়ে ভদ্র, অভিজাত, সুন্দরী, যুবতী
দাইকে এখানে হাজির করো।” ব্যাস, শুধু
যেন হুকুমেরই অপেক্ষায় ছিল সবাই। তারপর দেখতে দেখতে কিছুক্ষণের মধ্যে একের পর এক দাই আসতে থাকে। তারা শিশুকে দুধ পান করাতে চায়। কিন্তু শিশু যেন মুখ বন্ধ করে আছে। মুখ খোলেই না। বিপুল পুরস্কার আর বৃত্তির লোভে অনেকে অনেক রকম কায়দা কসরত চালায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মরিয়ম এসব দেখতে থাকে। হঠাৎ সে এগিয়ে এসে প্রাসাদ কত্রীর সমানে দাঁড়ায়। সে গভীর প্রত্যয় সহকারে বলে।
“যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে আমি এমন এক দাইকে হাজির করতে পারি, যার
দুধ এই শিশু খাবে বলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।”
“যাও, এখনই চলে যাও। তাকে নিয়ে এসো।” মরিয়ম একছুটে প্রাসাদ থেকে বের হয়। তার খুশীর আর অন্ত নেই। মহান ও অসীম
ক্ষমতাশালী আল্লাহর প্রশংসা করার ভাষা তার ছিল না। সারাটা পথ যেন সে বাতাসে উড়ে আসে। কোন পাথরে ঠোকর লেগে তার পায়ের নখ ফেটে গেছে, শরীরের
কোথাও মারাত্মক আঘাত লেগেছে অথবা পথের পাশের কাঁটাগাছের ঘষা লেগে তার পায়ের চামড়া কোথাও ছিড়ে গেছে- এসব
সে কোনো রকম টেরই পায়নি। কোনো এক দুর্বার আকর্ষণ, কোন
এক অপরিসীম মোহ যেন তাকে পেয়ে বসেছে। সে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
“আম্মি..... আম্মি,..” মা
যেন এই ডাকের প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি যেন তৈরী হয়েই বসে ছিলেন।
“এই যে মরিয়ম বাছা আমার," বলে তিনি লাফিয়ে মেয়ের সামনে আসেন। তার মুখে হাত চাপা দিয়ে ঘরের এক কোণে তাকে টেনে নিয়ে যান। মরিয়ম বলে চলে, “আম্মিজান, আল্লাহ তার বান্দাকে রক্ষা করেছেন।”
মেয়ে
মায়ের চোখের দিকে তাকায়। তার আম্মি কি চিন্তিত? কই
না তো, চিন্তার
লেশমাত্র তাঁর চোখের কোণায় দেখা যাচ্ছে না। আশংকার কোন ছাপ নেই সেখানে। আল্লাহর হুকুমের ওপর কী অটল বিশ্বাস! এজন্যেই
তো সে তার আম্মিকে এতো ভালবাসে। মা মেয়ের মনের কথা টের পায়। বলেন, মরিয়ম, আল্লাহর হুকুমে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আমি জানতাম আল্লাহ আমার ছেলেকে রক্ষা করবেন। জালেম বাদশাহ ফেরাউনের জল্লাদের হাত থেকে আমার ছেলেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। আল্লাহ ফেরাউনের প্রাসাদেই তার বাঁচার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর অসীম দয়া। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার দুচোখ পানিতে ভরে গেলো।
মরিয়ম বলে উঠলো “আম্মি, তাহলে
চলেন রাজপ্রাসাদে। ভাইয়া যে আপনার দুধ ছাড়া আর কারোর দুধ খাবে না।” কাপড়ের পোটলা একটা বগলে নিয়ে মা ও মেয়ে
বেরিয়ে পড়ে। যখন তারা রাজ প্রাসাদে পৌছুলো তখন ভীড় আরো বেড়ে গেছে। প্রাসাদকত্রীর মুখে দস্তুরমতো হতাশার ছায়া পড়েছে। অত্যন্ত বিমর্ষ মনে হচ্ছিল তাঁকে। ওদের দেখেই বলে উঠলো।
“এই যে মেয়ে, তুমি
না বলেছিলে ভাল দাই আনবে?”
“এই যে এনেছি বেগম সাহেবা।” মরিয়ম তার আম্মিকে এগিয়ে দেয়। আম্মি এগিয়ে যান। মনে মনে আল্লাহর শোকর আদায় করেন। ছেলেকে কোলে তুলে নেন। ততক্ষণে শিশু মায়ের কোলে উঠে চুক চুক করে দুধ খেতে শুরু করেছে।
No comments:
Post a Comment