![]() |
স্ট্রিক্টলি বিজনেস - ও. হেনরী - বাংলা অনুবাদ গল্প - ছোট গল্প - STRICTLY BUSINESS - by O. Henry - Bangla translation |
রঙ্গমঞ্চ এবং তার অভিনেতা অভিনেত্রীদের
হাঁড়ির খবর রাখেন বলে ভাবছেন তো?
কিন্তু শুনে রাখুন, সত্যিই
সব ভেতরের কথা যদি জানতেন, তাহলে শিল্পের এই ক্ষেত্রটিতে এতদিন
তিলধারনের জায়গা থাকতো না।
সংক্ষেপে গল্পটা বলি। বব হার্ট আর চেরী
নামে দু'জনে অভিনেতা অভিনেত্রীর গল্প। এরা দুজনেই দুটি ভিন্ন ভ্রাম্যমান নাট্যদলে ছোট
ছোট টুকরো অভিনয় করতো। এতে আয়ও কম, মনও
ভরেনা। কিন্তু দুজনেরই প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষ। বব হার্ট স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতে লং আইল্যাণ্ডে
বিরাট বাংলোর মালিক হয়ে জাপানী রাঁধুনীর হাতের রান্না খেয়ে আয়েস করে একা দিন কাটাবে।
আর চেরী কেবল টাকা জমাতে চায়, এর মধ্যেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কে সে
একটু একটু করে টাকা জমিয়ে যাচ্ছে। এখন কৃচ্ছসাধন করে ভবিষ্যতের রাস্তা নির্বিঘ্নে
আরামে কাটাতে চায় সে।
এদের দুজনের প্রথম সাক্ষাতেই এইসব কথা
হয়ে গিয়েছিল তাদের। একান্ত ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়েই তারা একসঙ্গে হার্ট-এর লেখা
একটি নাটকে অভিনয় করবে।
নাটকটিতে সম্ভাবনা আছে একথা স্বীকার করে
নিয়ে চেরী তার স্বাভাবিক বুদ্ধি ও বাস্তববাদিতা প্রয়োগ করে নাটকটিতে প্রয়োজনীয় পরিমার্জন
করে নিল।
প্রথম অভিনয় রজনীতেই নাটকটি দর্শকদের
মন কেড়ে নিল। অভিনয় শেষে হতেই হাতে খোলা চেকবই আর কলম নিয়ে বুকিং এজেন্টদের ভিড় লেগে
গেল। সপ্তাহে চারশো ডলারের চুক্তিতে সই করলো তারা।
সেদিন রাতে চেরীকে তার বোর্ডিং হাউসের
দরজার কাছে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নিচ্ছিল হার্ট। চেরী অনেক্ষণ ধরেই আনমনা হয়ে কি যেন
ভাবছিল। হার্ট বিদায় জানাতে যেন সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তাকে ঘরের ভেতর আসতে বললো। তাদের একান্ত ব্যবসায়িক সম্পর্কের মধ্যে এরকম ঘটনা এত দীর্ঘ দিনের
মহলা চলকালীন কখনও ঘটেনি। আজ চেরীর কি হোলো?
চেরী গম্ভীর ভাবে বললো, ভেতরে
এসো। এখন আমরা অনেক
বেশি টাকা জমানোর সুযোগ পেয়েছি। কি করে কমিয়ে জমা টাকার অংকটা আরো তাড়াতাড়ি বাড়ানো
যায়, সেই পরামর্শই করবো তোমার সঙ্গে। নিউইয়র্কে সাফল্যের সঙ্গে বেশ কয়েক সপ্তাহ
অভিনয় হোল চেরী ও হার্টের রোমাঞ্চকর নাটক ‘ইদুররা খেলবে”। তারপর নাটকের দল নিয়ে তারা এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াল।
এভাবে প্রায় দুবছর কেটে যাবার পর নিউইয়কে দ্বিতীয়বারের মত যবনিকা তুললো “ইদুরেরা খেলবে”। আর তার প্রথম দিনেই ঘটে গেল এক অঘটন।
নাটকের শেষ দৃশ্যে কাজ ছিল ববের পাশে
টেবিলে রাখা একটি ছবিতে গুলি করবে সে, আসলে পিস্তলের আসল গুলি। সেই
গুলি ছবি ভেদ করে দেওয়ালে লুকোনো একটি প্যানেলে আঘাত করবে, আর
সেই আঘাতে ছাদের সিলিং-এর একটা অংশ খুলে যাবে আর যে টাকাকে কেন্দ্র
করে নাটকের সংঘাত, সেই টাকা পয়সা হীরে, মুক্তো ঝরঝর করে ঝরে পড়ৰে। এই দৃশ্যটিতে দর্শক হাততালিতে ফেটে পড়ে।
কিন্তু আজ চেরীকে একটু নার্ভাস দেখাচ্ছিল।
গুলি ছোঁড়ার দৃশ্যে সে পিস্তল চালালো বটে, কিন্তু ছবির ফ্রেমে লাগার বদলে
হার্ট-এর গলায় লাগলো । হার্ট-এর কোন সংলাপ মন পড়লো না, কাটা কলাগাছের মত সে সটান মাটিতে পড়ে গেল। দর্শক অবশ্য এটা নাটকের নতুন চমকে
মনে করে হর্ষধ্বনি করে উঠলো। মঞ্চের সহযোগীরা
অবশ্য ব্যাপরটার গুরুত্ব বুঝতে পেরে তাড়াতড়ি পর্দা ফেলে দিয়ে মঞ্চের দরজার কাছ থেকে
একজন তরুণ ডাক্তারকে পেয়ে গিয়ে যেন হাতে চাদ পেলো।
ডাক্তার হার্টকে বেশ নেড়ে চেড়ে দেখে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। -খুব বেঁচে গেছেন মশাই,
গুলিটা শুধু একটু ছুঁয়ে গেছে, আর দুইঞ্চি এপাশ
দিয়ে গেলেই হয়েছিল আর কি। ক্ষতটা তেমন গভীর নয়, একটু ব্যাণ্ডেজ
লাগিয়ে দিলেই হবে।
ডাক্তার চলে যাবার পর একটু ধাতস্থ হয়ে শুয়েছিল হার্ট। বন্ধু ও সহকর্মী ভিনসেন্ট
উদ্বিগ্ন মুখে ঢুকলো,
-ভগবানের অসীম করুণা হার্ট,
তোমার বেশি আঘাত লাগে নি। মহিলাটিকে তো সামলানো যাচ্ছে না।
অবাক হোল হার্ট--কোন
মহিলা?
--মিস চেরী, আবার কে? সেই থেকে কেঁদে যাচ্ছে, তিন চারজন মিলে ধরে রাখতে পারছে না, কেবলই তোমায় দেখতে
চাইছে।
-আরে এটা তো দুঘর্টনা,
ওর কোন দোষ নেই। ওকে চিন্তা করতে বারণ করো। আর ডাক্তার বলেছে, দিন তিনেক আরাম করলেই আমি আবার
অভিনয় করতে পারবো, কাজেই এ সপ্তাহের টাকাটা সে পাবেই।
--তুমি কি মানুষ না রোবট?
টাকার শোকে কাঁদছে না সে। মেয়েটা যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছে,
একথা বাকি সবাই জেনে ফেললেও তোমার নিরেট মাথায় এখনও টোকেনি? লাফিয়ে উঠলো হার্ট।
--ভালবাসে আমাকে? চেরী? ওঃ বড্ড দেরী হয়ে গেছে, দেরী হয়ে গেছে।
-কিসের দেরী। কিসের দেরী হার্ট?
---আরো দুবছর আগেই তো আমার আর
চেরীর বিয়ে হয়েছে। প্রেমে পড়ার পক্ষে একটু দেরী হয়ে গেল না।
No comments:
Post a Comment