![]() |
বাংলা অনুবাদ গল্প,How is Your Mother,Simon Brett, Bangla translation,সাইমন ব্রেট |
অনুবাদ গল্প - তোমার মা কেমন আছেন ? - হাউ ইজ ইয়োর মাদার – সাইমন ব্রেট - How is Your Mother - Simon Brett – Bangla Translation
[তোমার মা কেমন আছেন?]
প্রতিদিনের
মত জর্জ সাইকেলে করে রুটির দোকানে এল। ওদের শহরটা ছোট। প্রায় গ্রামের মতই। সবাই সবাইকে
চেনে এখানে। জর্জ হেরাল্ড এখানে এসেছে প্রায় দু’বছর। শহরের এক কোণে
ছোট্ট একটা বাড়ি কিনে উঠেছে সে। সে আর তার শয্যাশায়ী মা। জর্জের মা অবশ্য এতটাই অসুস্থ
যে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেন না। জর্জ হেরাল্ড স্থানীয় একটি কোম্পানির অ্যাকাউন্ট
সেকশনে কাজ করে।
জর্জের
সাইকেলের ঘণ্টা শুনে বেরিয়ে এলেন দোকানের মালিক, হাতে গরম রুটি। রুটিগুলো জর্জের সাইকেলের
ধাস্কেটে তুলে দিলেন তিনি।
‘চমৎকার দিন, তাই না,
জর্জ?’
‘হা। অবশ্যই। ধন্যবাদ,
স্যর।’
‘তো, তোমার মা কেমন আছেন?’
‘আজ একটু ভাল।’
‘আহারে, ভদ্রমহিলা বড়ই
কষ্ট পাচ্ছেন।’ মাথা নাড়লেন দোকানি।
জর্জ ঘড়ি
দেখল। তাড়া দেখা গেল তার মধ্যে। ‘চলি, স্যর। মা বাসায়
একা। তা ছাড়া, অফিসে যেতে হবে।’
‘হ্যা, হ্যা। বিদায়।
দেখা হবে।’
জর্জ বো
করে সাইকেল ঘুরিয়ে চলে গেল। পেছন থেকে এসে দাঁড়ালেন দোকানির স্ত্রী। অ্যাপ্রনে হাত
মুছতে মুছতে সমবেদনার সুরে বললেন তিনি, ‘আহারে! ছেলেটা কী কষ্টই
না করছে। বিয়ে করেনি, একজন গার্লফ্রেণ্ড পর্যন্ত নেই। সারাদিন অসুস্থ বুড়ো মায়ের
সাথে থাকা...’
দোকানি
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘বড়ই ভাল ছেলে।’
জর্জ বাড়ি
পৌছে দেখল দরজায় পোস্টম্যান দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে হাসল সে।
‘সরি, মি. হেরাল্ড। আমি
ভেবেছি আপনি বাসায়। আপনার মা বোধহয় বেল শুনতে পাননি।’
জর্জ লজ্জিত
হেসে দরজা খুলতে লাগল। ‘দুঃখিত। মা কানে ভাল শোনেন না। তা ছাড়া, ওনার
হাঁটা-চলার ক্ষমতা নেই।’
পোস্টম্যানের
চোখে সহানুভূতি ফুটল। ‘সরি, স্যর। তা আজ উনি কেমন আছেন?’
‘একই রকম।’
জর্জ বাড়িতে
ঢুকেই চেঁচাল। ‘আমি ফিরেছি মা। এখুনি আসছি।’ এবার পোস্টম্যানের
দিকে মনোযোগ দিল ও। ‘তো আপনার জন্যে কী করতে পারি?’
‘আপনার একটা রেজিস্টার্ড
চিঠি এসেছে। সাইন করতে হবে।’
পোস্টম্যানের
খাতায় সই করে চিঠিটা নিল জর্জ। পোস্টম্যান চলে গেলে দরজা লাগিয়ে চিঠিটা পড়ল। চিঠি
পড়া শেষে দোতলায় মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়াল সে। ‘মা! আমি লটারি জিতেছি।
১০,০০০ পাউণ্ড। আমরা অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি, মা!’
দু’দিন পর জর্জ অফিস শেষে
বাড়ি যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে, হঠাৎ বসের রুমে ডাক পড়ল।
‘মি. হেরাল্ড, আপনি একটু
বসুন। আমি সাউথে লোক পাঠাব। আপনি যাবেন।’
জর্জের
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ‘কিন্তু স্যর...’
‘কোনও সমস্যা?’
‘আমার মা ভীষণ অসুস্থ,
স্যর। শয্যাশায়ী। তাকে ফেলে কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
‘একটা হোমে দিয়ে আসুন
না। অথবা হাসপাতালে।’
‘না, স্যর। মাকে ছাড়া
আমি থাকতে পারব না। দুটো দিনেরই তো ব্যাপার...’
‘দুঃখিত, স্যর।’
বস্ এবার
বিরক্ত হলেন। জর্জ আস্তে করে বের হয়ে এসে অফিস ছাড়ার জন্য তৈরি হলো।
বাড়ি ফিরে
জর্জ চমকে উঠল। দরজা ভাঙা! দ্রুত ভেতরে ঢুকল ও। রান্নাঘরে ভীষণ ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধ।
প্রচণ্ড ভয় পেল জর্জ। দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে যেতেই ওখান থেকে বেরিয়ে এল স্থানীয়
পুলিশ সার্জেন্ট। তার চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি। জর্জকে দেখে থমকে গেল সে। অস্বাভাবিক শীতল
গলায় জিজ্ঞেস করল। ‘হ্যালো, জর্জ! কোথায় ছিলে এতক্ষণ?’
‘মাত্র অফিস থেকে এলাম।
কী হয়েছে, সার্জেন্ট?’
সার্জেন্ট
শ্রাগ করল। ‘তেমন কিছু নয়। তুমি পানির হিটার অফ করতে ভুলে গেছিলে। পাশ
দিয়ে যাচ্ছিলাম। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে ভেতরে ঢুকলাম। কারণ সবাই জানে তোমার মা শয্যাশায়ী।
অসহায় বৃদ্ধাটি হয়তো পুড়েই মরবেন। তেমন কিছু ক্ষতি অবশ্য হয়নি। হিটারটা আর কাবার্ডের
একটা অংশ পুড়ে গেছে।’
জর্জ স্বস্তির
নিঃশ্বাস ফেলল। ‘ধন্যবাদ, সার্জেন্ট।’
সার্জেন্ট
এক পা এগিয়ে এল। ‘কিন্তু, জর্জ...তোমার মা কোথায়?’
জর্জ চমকে
উঠল। ‘মা-নে? ওই তো ওপরে,
বেডরুমে।’
‘আমি পুরো বাড়িটা দেখেছি,
জর্জ। এমনকী ভাঁড়ারেও। তোমার মা কোথাও নেই। এমনকী একজন ভদ্রমহিলার ব্যবহার্য কিছুই
এ বাড়িতে নেই। তোমার মা-বাবা কিংবা আত্মীয়-বন্ধু বান্ধব কারও ছবিও নেই।’
জর্জের
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এক পা পিছিয়ে এল ও।। সার্জেন্ট আরও সামনে বাড়ল।
‘ঘটনা কী, জর্জ? তোমার
মা কোথায়?’
‘মা...মা...মা তো কিছুদিন
আগে... মারা...গেছে।’
সার্জেন্ট
দ্রুত এগিয়ে এসে জর্জের কাধ ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। ‘শান্ত হয়ে বসো, জর্জ।
কী হয়েছিল, বলো।’
‘মা...মা...মারা গেছেন।’
‘কবে?’
‘দু’দিন আগে...না...তিনদিন
বোধহয়।’
‘কীভাবে?’
‘হঠাৎ করে। ঘুমের মধ্যে।’
‘তুমি তাঁর শেষকৃত্য
করোনি?’
‘না। আমি বিশ্বাস করতে
পারিনি যে মা নেই কাউকে বলোনি? বলব কী, আমি নিজেই তো বুঝতে পাছিলাম না।’
‘লাশ কী করেছ?’
‘বাগানে...বাগানে...’
সার্জেন্ট
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, ‘দুঃখিত, জর্জ। আমি জানি
না, তুমি সত্যি কী করেছ। কিন্তু তুমি সম্ভবত মার্ডার কেসে পড়তে যাচ্ছ।’
পরদিন সকল
স্থানীয় ও দৈনিক পত্রিকায় খবরটি এল। রুটির দোকানি আর তাঁর স্ত্রী মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলেন
খবরটি।
‘রহস্যময় মাতৃহত্যা।
১০,০০০ পাউণ্ড লটারি বিজয়ী আটক। দোকানির স্ত্রী খুবই দুঃখের সাথে মাথা নাড়লেন। বিশ্বাসই
হয় না এমন একটা ছেলে...’
দোকানি
পেপারটা দেখালেন। এখানে লিখেছে জর্জ আসলে পিতৃপরিচয়হীন। ওর মা ক্যাবারে ড্যান্সার
ছিল। জন্মের পরই ওকে চার্চে ফেলে যায় মহিলা। তার খোঁজ চলছে। তা হলেই বোঝা যাবে ওই
মহিলাই খুন হয়েছে, নাকি অন্য কেউ।
পুলিশ জর্জের
পুরো বাগান তুলে ফেলল। কিন্তু কোনও লাশ পেল না। জিজ্ঞাসাবাদ হলো আবার। জর্জ শান্ত গলায়
বলল, আমার মা কে আমি তা জানি না। চার্চে বড় হয়েছি আমি। অনাথ হিসেবে লেখাপড়া করেছি।
অবশেষে একটা চাকরি নিয়ে আলাদা জীবন শুরু করলাম। কিন্তু অন্য উপদ্রব শুরু হলো। সবাই
পরিচিত হতে চায়, বন্ধু হতে চায়, পার্টিতে নিয়ে যেতে চায়...এমনি যন্ত্রণা। আমি একাকী
জীবন চাই। তাই বার বার চাকরি বদলালাম। শহর পরিবর্তন করলাম। তারপর বের করলাম এই বুদ্ধি।
মা বানালাম একটা, তাকে ভীষণ অসুস্থ বানালাম। লোকের সঙ্গ এড়াতে এই মায়ের জুড়ি নেই।
মায়ের কথা বললেই কেউ আর আমাকে বিরক্ত করে না। শেষে এমন হলো, আমি নিজেই তার অস্তিত্বে
বিশ্বাস করা শুরু করলাম। মনে হলো মা আছে। সত্যি আছে।
খবরের কাগজের
হেডিং বদলে গেল » জর্জ রাতারাতি খুনী থেকে এক নিঃসঙ্গ অসহায়
যুবকে পরিণত হলো। এক রিপোর্টার খুঁজে বার করল জর্জের আসল মাকে। নিউ টাউনের এক বারের
মহিলা দালাল সে এখন। বুড়ি জানাল পঁচিশ বছর আগে এই ছেলেকেই সে চার্চে ফেলে গিয়েছিল।
জনগণের চোখে সমবেদনার প্রতীক হয়ে উঠল জর্জ। পেপারে হেডিং এল-নিঃসঙ্গ জীবনের অদৃশ্য
মা।
পেপারটা
নিয়ে সার্জেন্ট অফিসে ঢুকল। জর্জকে আজ ছেড়ে দেয়া হবে। এ ক’দিনেই বিধ্বস্ত হয়ে
পড়েছে ছেলেটি।
‘যাও, জর্জ। বাড়ি যাও,’ বলল সার্জেন্ট।।
জর্জ করুণ
চোখে তাকাল সার্জেন্টের দিকে। ওর জন্যে প্রগাঢ় মমতা বোধ করল সার্জেন্ট। ‘কী হলো?’
‘...আচ্ছা, তুমি না অস্ট্রেলিয়া
যাবে বলেছিলে?’
‘হ্যা।’
‘লটারির টাকা তুলবে কবে?’
জর্জ অনিশ্চিত
ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। সার্জেন্ট ওর হাত ধরল। ‘চলো, আমিও যাচ্ছি।’
এক সপ্তাহ
পরের ঘটনা। জর্জের প্যাকিং শেষ। একটু আগে পাড়া-পড়শীরা দেখা করে গেছে। সবাই সহানুভূতি
দেখাল। জর্জ কালই যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পথে।
রান্নাঘরে
কফি খাচ্ছিল জর্জ, হঠাৎ বেল বাজল। ও নিশ্চিত, পড়শীদের কেউ। বিদায় জানাতে এসেছে। ভীষণ
অস্বস্তি নিয়ে দরজা খুলল ও। অবাক হলো। একজন বৃদ্ধা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে
চড়া মেকআপ এবং সস্তা দামের এমন জামা কাপড় পরে আছে যেগুলো সাধারণত টিন-এজাররা ধরে।
জর্জ মহিলাকে চিনতে পারল না।
অথচ মহিলা
একগাল হাসল ওকে দেখে।
‘হ্যালো, জর্জ।’
জর্জ জবাব
দিল না।
‘ঢুকতে দেবে না নাকি?
আমি অনেক দূর থেকে এসেছি।’
মহিলা জর্জকে
আলতো করে সরিয়ে ঢুকে পড়ল হিলের খট খট শব্দ তুলে!
এবার কথা
বলল জর্জ।
‘সরি, ম্যাম। আপনাকে
আমি চিনতে পারিনি।’
‘আশ্চর্য! আমি তোমার
মা, জর্জ!’
জর্জ মুহুর্তে
শক্ত হয়ে গেল। হঠাৎ ওর চোখে পড়েছে মহিলার চুল সোনালি এবং কার্লি, চোখ নীল এবং ঠোট
পাতলা-ঠিক ওর মতই।
মহিলা বলে
যাচ্ছে। আমি তোমাকে ফেলে গেছি, কারণ আমার কোনও উপায় ছিল না। তা ছাড়া আমি জানতাম না
তোমার বাবা কে। এখন আমি তোমার খোঁজ পেয়েছি। তুমি এখন ধনী। তোমার উচিত এখন এই বৃদ্ধা
দরিদ্র মাকে দেখাশোনা করা।’
মহিলা বলেই
যাচ্ছে। জর্জের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে শুরু করল। মুঠো শক্ত করে ও মহিলার দিকে এগোল।
লাল হয়ে উঠেছে মুখ।
মহিলা এদিকে
বলেই চলেছে। ‘দেখাশোনা তেমন দরকার নেই। তুমি আমাকে নগদ টাকা দিতে পারো।
ইচ্ছে করলে মাসে মাসে দিতে পারো...।’
জর্জ সামনে
এগোল আরও। হঠাৎ মহিলা বুঝে ওঠার আগেই তার গলা চেপে ধরল ও। আর চাপা গলায় বলতে লাগল।
‘আমার জীবনটা শেষ করে
তুই টাকা নিতে এসেছিস!’
জর্জের
যখন হুঁশ ফিরল তখন মহিলার লাশ মেঝেতে লুটিয়ে আছে। জর্জ ঘাবড়ে গেল। কী করবে এখন? এক
মুহূর্ত চিন্তা করে লাশটা বাগানে মাটিচাপা দিল ও। তারপর গাড়ি নিয়ে সোজা চলে এল পুলিশ
স্টেশনে।
ওর কথা
শুনে হাই তুলল সার্জেন্ট। ‘তুমি বলতে চাচ্ছ তোমার মাকে তুমি খুন করেছ?’
‘হা।’
‘গলা টিপে?’
‘হ্যা।’
‘তারপর? মাটিচাপা দিয়েছ
বাগানে?’ জর্জ এবার অসহিষ্ণু
হয়ে উঠল।
‘হ্যাঁ। হ্যাঁ। সার্জেন্ট।
আমাকে গ্রেফতার করুন।’
সার্জেন্ট
ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকাল। ‘তোমার ফ্লাইট কখন, জর্জ?’
‘কাল সকালে।’
‘তা হলে বাসায় গিয়ে
একটা কড়া ঘুম দাও। নইলে সকাল সকাল উঠতে পারবে না। প্যাকিং শেষ?’
‘আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি
চলে যাব?’
‘অবশ্যই যাবে, এবং এয়ারপোর্টে
পৌছে আমাকে ফোন করে জানাবে যে নিরাপদে পৌঁছেছ।’
জর্জ অবাক
হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, ‘আমি সত্যি চলে যাব?’
ওর চেয়েও
বেশি অবাক গলায় সার্জেন্ট বলল, ‘তা না হলে কী করবে?’
‘মায়ের লাশটা...’ ওকে মাঝপথে থামিয়ে
দিল সার্জেন্ট। ‘ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামিও না। বাড়ি যাও।’
‘কিন্তু...’
‘জর্জ! এখন রাত ১২.১০
বাজে। আমি এত রাতে আর বিরক্ত হতে চাই না। তুমি যাও। শুভ রাত্রি।’
জর্জ পুলিশ
স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল। পরিষ্কার আকাশ। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। জর্জ আকাশ ভরা তারার দিকে
চেয়ে হালকা গলায় বলল, তা হলে কাল আমরা অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি, মা।’
মূল: সাইমন
ব্রেট (Simon
Brett)
রূপান্তর:
সাবরিনা খান ছন্দা
সম্পাদনা:
মারুফ মাহমুদ
No comments:
Post a Comment